খুলনা-ঢাকা যাত্রীবাহি ট্রেনের সময়সূচির কারণে জনদূর্ভোগ
সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা:
নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চালু হলেও খুলনাবাসীর স্বপ্ন পূরণে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে ট্রেন যাত্রার সময় নিয়ে। ট্রেনে যাতায়াতের সময়, ভাড়া, ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও ট্রেনের সূচি নিয়ে অসন্তুটি আছে যাত্রীদের। যাত্রীদের অভিযোগ, খুলনা থেকে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ছেড়ে যায় ভোর ৬ টায়, যখন পুরোপুরি অন্ধকার। ভোরের আলো ফুটতে লেগে যায় আরও প্রায় পৌনে এক ঘন্টা। এমন একটা সময় দূর দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা বাসা থেকে বের হতে হয় আরও আগে। ফলে এমন একটা সময়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাতায়াতের ক্ষেত্রে, আবার ছিনতাইয়ের ভয়তো রয়েছেই। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শীতকালে ট্রেনের সময় ৭ টায় করা জরুরী এমন মত অধিকাংশ যাত্রীর।
আবার ঢাকা থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে এসে খুলনায় পৌঁছাতে বেজে যায় প্রায় রাত বারোটা। মধ্যরাতে ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের গন্তব্য পৌছাতে পোহাতে হয় ভোগান্তি। পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রুটে সময় লাগছে মাত্র পৌনে ৪ ঘণ্টা। দূরত্ব, যাতায়াতের সময় ও ভাড়া কম হওয়ায় রেলওয়ের এই উদ্যোগে খুশী যাত্রীরা। সময় পরিবর্তনের পাশাপাশি ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর জোর দাবি যাত্রীদের। ২৪ ডিসেম্বর ট্রেন চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন খুলনা থেকে যাত্রীদের গড় যাতায়াতের হার ৯৮ শতাংশ।
যাত্রীদের দাবি বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি খুলনায় যুক্ত করলে সময় পুর্ননিধারণ করা সহজ হবে। খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, নতুন রুটে দূরত্ব কমে যাওয়ায় এখন যাতায়াতে সময় কম লাগছে। এ ছাড়া ভাড়াও কম লাগছে। এতে আমরা খুশী। তবে শীতকালে ট্রেন ছাড়ার সময়সূচি ভোর ৬টার পরিবর্তে ৭টায় করলে ভালো হয়। কৈয়া বাজার এলাকা থেকে আসা যাত্রী সোহেল হোসেন বলেন, শীতকালে ভোর ৬টায় অন্ধকার থাকে। ট্রেনে যাওয়ার জন্য আমি রাত সাড়ে ৪টায় বাসা থেকে বের হই। এরপর স্টেশনে আসার জন্য যানবাহন পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সাধারণত এমন সময় গাড়ি পাওয়া যায় না। সকাল ৬টার পরিবর্তে সিডিউল এক ঘন্টা বাড়ানো বা ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলে অনেক ভালো হতো। ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীক কাজ সেরে খুলনা ফিরছিলেন শহিদুজ্জামান। বলছিলেন আমার বাসা চাঁনমারীতে। সময় বাঁচানোর জন্য ঢাকা থেকে ট্রেনে আসছি। এখন এতো রাতে বাসা পর্যন্ত যেতে বিপাকে পড়েছি। শহরের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির যে অবস্থা, তাতে নিরাপদে বাসায় পৌঁছানো নিয়ে ভয়ে আছি। ঢাকা থেকে ট্রেনের সময়টা ৮ টার যায়গায় সন্ধা ৬ টা অথবা ৭ টা করলে ভালো হতো। নতুবা ভিন্ন শিডিউলে এই রুটে আরো একটি ট্রেন চালু করলে সমস্যার সমাধান হবে। নতুন এই ট্রেনের বিষয়ে মোঃ মোহসীন রেজা নামে এক যাত্রী বলেন, এই ট্রেনটি খুলনাবাসীর জন্য আশির্বাদ। ট্রেন যখন চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা ঘুরে যেতে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা সময় লাগতো। এখন পৌনে চার ঘন্টায় ঢাকা পৌঁছায়, খুবই ভালো হয়েছে খুলনাবাসীর জন্য। সিডিউল অনুযায়ী সকাল ৬টায় যাত্রায় যাত্রীদের জন্য একটু কষ্টকর। তবে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। মোঃ রবিউল বলেন, ট্রেনটি খুলনার জন্য একটি আশির্বাদ এবং বহু আকাঙ্খিত। তবে শীতকালে ট্রেনের সময় ৭ টায় হলে ভালো হতো। এতো স্বল্প সময়ে ট্রেনে করে খুলনা থেকে ঢাকা যাব কখনোই আমরা ভাবিনি। খুলনা রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার আশিক আহমেদ জানান, ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চালুর পর থেকে খুলনা স্টেশন থেকে নির্ধারিত সিট প্রতিদিন ৯৮ শতাংশই পূরণ হচ্ছে। যাত্রীদের চাহিদা সবক্ষেত্রে পূরণ করা কঠিন হয়ে যায়। একটি ট্রেনই ঢাকা খুলনা, ঢাকা- বেনোপোল মোট চারবার যাতায়াত করে। ফলে সময় পরির্বন করা কঠিন হয়ে যায়। এ ব্যাপারে রেলওয়ের পাকসী বিভাগের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার শাহসুফি নূর মোহাম্মদ দৈনিক প্রবাহকে বলেন, সবার সুবিধামত সময় নির্ধারণ করা কঠিন। কেউ চায় সকালে খুলনা থেকে যেয়ে অফিস করতে, কারো বক্তব্য ওই সময়টায় স্টেশনে আসার ক্ষেত্রে যানবাহন না পাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে যাত্রীদের নিয়ে একটা জরিপ করবো, দেখি অধিকাংশের মতামত কি আসে। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও মতামত নেয়ার চেষ্ঠা করবো। এদিকে সোমবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন চলাচল করে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস। ট্রেনটি যাওয়া-আসার পথে যশোরের নওয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন ও ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। খুলনা রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছায় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। এটি আবার রাত ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনায় পৌঁছায় নিয়মিত। ট্রেনের সিট রয়েছে ৭৬৮টি। এই ট্রেনে ১১টি যাত্রীবাহী কোচ এবং একটি লাগেজ ভ্যান রয়েছে। ট্রেনটিতে মোট ১২টি বগি রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি যাত্রীবাহী ও ১টি পণ্যবাহী। ১১টি বগিতে আসন সংখ্যা ৭৬৮টি। এই রুটের দূরত্ব ৩৭৮ কিলোমিটার। খুলনা-ঢাকা রুটে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ভ্যাট ছাড়া ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ৭৪০ টাকা, এসি সিট শ্রেণির ভাড়া ৮৮৫ টাকা এবং এসি বার্থ শ্রেণির ভাড়া ১ হাজার ৩৩০ টাকা।