রাবির সাত হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় উত্তাল ক্যাম্পাস
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) রাতের আঁধারে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হল, সৈয়দ আমীর আলী হল, মতিহার হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল, মাদার বখ্শ হল, শেরে বাংলা হল এবং শাহ মখদুম হলের বিভিন্ন স্থানে এই জঘন্য ঘটনা ঘটে। হলের মসজিদ ও বুক সেলফে রাখা কোরআন শরীফের পৃষ্ঠা আংশিক পোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী জানান, কোরআন শরীফের প্রথম ও শেষ দিকের কিছু অংশ পুড়িয়ে বইয়ের বাকিটুকু অক্ষত রাখা হয়, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, সৈয়দ আমীর আলী হলে মুক্তমঞ্চে কোরআন পোড়ানোর পাশাপাশি দেওয়ালে ভারতীয় রাজনৈতিক দল বিজেপির লোগো আঁকা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। মসজিদের পেশ ইমাম জানান, সেদিন পবিত্র কোরআনের কয়েকটি পৃষ্ঠা পুড়িয়ে একটি চিঠি রেখে যাওয়া হয়। চিঠিতে গুনাহের স্বীকারোক্তি থাকলেও সাম্প্রতিক ঘটনায় সেই ধারা ভিন্ন, যা ইঙ্গিত দেয় এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে উপ-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাাগুলোও অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, ‘এটি গভীর ষড়যন্ত্রমূলক একটি ঘটনা। কোরআন পোড়ানোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।’
ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রোববার প্যারিস রোডে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। ‘আল কোরআনের অপমান সইবে নারে মুসলমান, ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ সেøাগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত হয়। ইসলামি ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীরা প্রত্যেক হলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এমন ঘৃণ্য কাজ করতে পারে না। এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমাদের সকলকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার জানান, ঘটনাটি পরিকল্পিত এবং এতে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।