বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

আদমদীঘি প্রতিনিধি:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বগুড়ার আদমদীঘিতে সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের আট নম্বর ওয়ার্ডের মালশন ও সাহেব পাড়া মহল্লায়।
গত শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আনদোলনের প্রতিনিধির পরিচয়ে আতিক নামে এক ছেলে কয়েকদিন ধরে টিসিবি, বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য প্রায় শতাধিক ব্যক্তির কাছে থেকে ৩৫০ টাকা করে নিয়েছেন। আতিক সান্তাহার পৌর শহরের মালশন গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে।
ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয় দেওয়া আতিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আদমদীঘি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ফাহাদ এই বিষয়ে অবগত রয়েছেন বলে তিনি দাবী করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আল-ফাহাদ জানান, আতিক নামের কোন ছেলে কে আমার জানা নাই। কোন অবস্থায় সরকারি ভাতা আবেদন প্রতি ৩৫০ টাকা নেওয়া যাবে না। আর আমার নাম দিয়ে টাকা নেওয়াটা অপরাধ। এ বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।
ভুক্তভোগী রেহেনা বেওয়া জানান, বিধবা ভাতার কার্ড করে দিবে বলে আমার বাড়িতে আসেন আতিক ও তার সহপাঠীরা। তারা আমাকে বলেন উপজেলা বিভিন্ন দপ্তরের লোকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। এরপর ভোটার আইডির ফটোকপি ও ছবি নিয়ে যান এবং পরিশেষে অনলাইন আবেদন করার জন্য ৩৫০ টাকা নেয়৷
খোতেজা নামের আরও এক ভুক্তভোগী জানান, আমার স্বামী পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। কয়েকটা ছেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে ভাতার কার্ডের কথা বলছিলো। এ সময় সরকারি সুবিধা পেতে তাদের কথায় আমিও রাজি হই। তখন আমার স্বামীর ভোটার আইডি দেখে বলেন বয়স্ক ভাতার কার্ড করা সম্ভব। এটা এত দিনেও করেননি কেনো? পরে ভাতার কার্ড করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৩৫০ টাকা খরচ নেন। অপরদিকে ৬৩ বছর বয়সি আজিবর হোসেন জানান, বর্তমানে বেকার হয়ে বাড়িতে আছি। সংসারের বিষয়টি ছেলেরা দেখছেন। এখন আগের মতো আর কোথায় কাজ কর্মে যেতে পারি না। এর আগে বয়স্ক ভাতার জন্য পৌর সভাতে গিয়েছিলাম বয়স কম থাকায় কার্ড করা সম্ভব হয়নি। গত পরশু হঠাৎ এলাকায় কিছু ছেলেরা আমার বাড়িতে এসে আমাকে দেখে বলেন বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিবে। তখন আমার থেকে ভোটার আইডি ও ছবি নেন। আর কিছু খরচের টাকা নেয়।
মালশন গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সান্তাহার পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহজাহান আলম স্বপন জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে আমার এলাকায় আতিকসহ কিছু ছেলেরা সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। প্রথমে মনে করলাম সরকার থেকে হয়তো তাদের কোন দায়িত্ব দিয়েছে। এরপর তাদের পরিচয় জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি পরিচয় দেন। পরে এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম প্রায় শতাধিক লোকজনের থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৩৫০ টাকা করে নিয়েছেন। বিষয়টি শুনে অবাক হলাম। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের নিকট হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ জানান, সরকারি কোন সুবিধা পেতে কোন টাকার প্রয়োজন নাই। বিশেষ করে যে কোন ভাতা সংক্রান্ত। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *