চাহিদামতো বিদু্যৎ পেতে বকেয়া পরিশোধে চাপ
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
আসন্ন গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদু্যৎ পেতে বকেয়া পরিশোধের চাপে রয়েছে বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি। আগামী মার্চ ও রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যতের জন্য উৎপাদন দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়াতে হতে পারে। এজন্য দেশি-বিদেশি উৎপাদনকারীদের বকেয়ার পরিশোধ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে সংস্থাটিকে।
ইতিমধ্যেই ভারতের আদানি পাওয়ারসহ দেশি-বিদেশি বিদু্যৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বকেয়ার বড় একটি অংশ চলতি মাসের মধ্যে পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে। আর তা না করা গেলে রমজান ও বোরোর মৌসুমে সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে।
যদিও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আদানি পাওনা পরিশোধ আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু চলমান বিলগুলো বকেয়া থেকে যাওয়ায় চাপ কমছে না। তাই সংস্থাটি বিদ্যমান বকেয়া এখনো ৮শ’ মিলিয়ন ডলারে উপরেই রয়েছে। তাই আগামী দিনে পূর্ণ চুক্তি অনুযায়ী শতভাগ বিদু্যৎ পেতে এই অর্থ কীভাবে পরিশোধ করা হবে তার পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ চেয়েছে আদানি পাওয়ার।
অন্যদিকে পাওনা পরিশোধের বিষয়ে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে দেশি বেসরকারি বিদু্যৎ উৎপাদকরাও। গ্রীষ্মে বিদু্যৎ পেতে এ সপ্তাহের মধ্যে মোট বকেয়ার বড় একটি অংশ পরিশোধ করার দাবি জানিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায় প্রতিষ্ঠানগুলো।
চালের বাজারে অস্থিরতা / অবৈধ মজুতদারিতে লাগাম নেই
বিপিডিবির তথ্যমতে ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে আদানি পাওয়ারের এবং দেশের বেসরকারি বিদু্যৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়ার পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকা। গত সপ্তাহে পাওনা অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছে তারা। তাদের দাবি দ্রম্নত এই অর্থ না পেলে আসন্ন গরমে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদু্যৎ উৎপাদন করতে পারবে না তারা। তাই আগামী রমজান ও বোরোর সেচের বিদু্যৎ সরবরাহ পেতে ১০ দিনের মধ্যে অন্তত বকেয়া পাওনার অর্ধেক পরিশোধ করতে সরকারকে অনুরোধ করেছে।
বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত জানিয়েছেন, বিপিডিবির কাছে এই মুহূর্তে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর বকেয়া আছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। চুক্তিতে ৪৫ দিনের মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও তা ছয় মাসেও পরিশোধ করা
হয়নি। এরমধ্যে অন্তত অর্ধেক বা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা হলে সময়মতো হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) আমদানি করা যাবে। উলেস্নখ্য বিআইপিপিএ’র সদস্যদের বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৯ হাজার মেগাওয়াট, যার প্রায় অর্ধেক এইচএফও-ভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্ভর।
অন্যদিকে আদানির চিঠিটিতে বলা হয়েছে, পিডিবির অর্থ পরিশোধের ধরনের উন্নতি হলেও এসব অর্থ প্রদান এবং বর্তমান মাসিক বিলগুলো কোনোভাবে পরিশোধ করতে পারছে না। যে কারণে বিদু্যৎ রপ্তানির বিল বাবদ বকেয়া ৭৭১ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার আউটস্ট্যান্ডিং রয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিদু্যৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) উত্থাপিত চালান (ইনভয়েস) পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারেনি।
এমতাবস্থায় মাসের পর মাস ধরে বকেয়া জমা হচ্ছে। এছাড়া গত কয়েক মাসে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যকার যে টানাপোড়েন চলছে তা দু-পক্ষের জন্যই জটিল করে তুলছে। এসব সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গোড্ডা থেকে বিদু্যৎ সরবরাহের বিদ্যমান সব বিষয় সমাধানের জন্য ঢাকায় একটি বৈঠকের আয়োজন করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছে আদানি গ্রম্নপ।
এদিকে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) অর্থমন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সময়মতো বিদেশি সরবরাহকারীদের প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ না করা হলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, চিঠিতে এলএনজি আমদানির বাবদ ভর্তুকি বরাদ্দ থেকে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার অনুরোধ করা করেছে।
পেট্রোবাংলা তাদের চিঠিতে আরও বলেছে, নির্ধারিত সময়ে বকেয়া পরিশোধ করা না হলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সরবরাহকারীদের এলএনজি সরবরাহ বন্ধ করার আশংকা রয়েছে। অন্যদিকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির দরপত্রে সরবরাহকারীদের অংশগ্রহণ কমতে পারে। পাশাপাশি বকেয়া দেরিতে পরিশোধের কারণে জরিমানা সুদ আরোপ হতে পারে।
তবে বিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, বর্তমানে বিদেশি জ্বালানি সরবরাহকারীদের কাছে বিপিসির কোনো বকেয়া দেনা নেই। ডিসেম্বর মাসে ডলারের সংকট থাকায় সব সরবরাহকারীর বিল পরিশোধ করা হয়নি। এজন্য কিছু নিয়মিত বিল বকেয়া রয়েছে।
বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেছেন, আইপিপি (স্বতন্ত্র বিদু্যৎ উৎপাদনকারী)-দের বকেয়া দাবি করাটা স্বাভাবিক। আমি তাদের সঙ্গে দেখা করব, কীভাবে অর্থ পরিশোধ করা যায় এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। অন্যদিকে আদানির চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একটি রুটিন চিঠি।