ইসলামপুর জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলীর অনিমে সমগ্রদেশ গ্রামীণ পানি সরবরাহ ৫কোটি টাকার প্রকল্প আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে!
ওসমান হারুনী,ইসলামপুর(জামালপুর)প্রতিনিধি:
পতিত আওয়ামী সরকারের ইসলামপুর আসনের তিন তিন বারের এমপি পরবর্তীতে ধর্মমন্ত্রী, পলাতক ফরিদুল হক খান দুলাল ইসলামপুরের যেসকল দুর্নীতিবাজ অফিসারের সহায়তায় উন্নয়নের নামে প্রকল্প এনে লোটপাট, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ করেছেন, ইসলামপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান তাদের একজন। ধর্মমন্ত্রীকে খুশী করতে প্রকল্পে বাস্তবায়নে কোন নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা না করে ম্যানেজ সিস্টেমে দলীয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি স্হাপন করেছেন সমগ্রদেশ গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সাবমার্সিবল পাম্প ওভারেহেড গভীর নলকূপ।
একই উপজেলায় সরকারি চাকুরির বিধি লংঘন করে দীর্ঘদিন চাকুরী করে আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্টা নিয়ে দূর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। সরকার পরিবর্তন হলেও একই কায়দা বহাল তবিয়তে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের সঠিক তদারকি না করে ম্যানেজ সিস্টেমে দায়িত্ব পালন করার অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সমগ্রদেশ গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের নিয়ম ছিল দলমত নির্বিশেষে উপজেলার স্বর্বস্তরের জনগণের ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু, তা না করে মন্ত্রীকে খুশী রাখতে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে রাষ্ট্রের সে সুবিধা পৌঁছে দিয়েছেন ইসলামপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থবছরে “সমগ্রদেশ গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সাবমার্সেবল পাম্প ওভারেহেড গভীর নলকূপ স্থাপন ” নামে একটি পাইলট হাতে নিয়েছিল বিগত সরকার। এ পাইলট প্রকল্পে দেশের যেকটি জেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল জামালপুর তাদের অন্যতম।
উক্ত প্রকল্পের আওতায় জেলার ইসলামপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ৪৭টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ পায়। যার প্রতিটির বরাদ্দ ব্যয় ১০ লাখ টাকা। নিয়মানুযায়ী ১টি গভীর নলকূপ থেকে আশপাশের ১০টি বাড়িতে এর সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল । গভীর নলকূপ গুলো স্হাপনের নিয়ম হলো অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বসবাসকারী এবং আর্থিক ও সামাজিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে নলকূপ/পানির উৎস স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
কিন্তু, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ ইউনিয়ন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে ব্যতিক্রম চিত্র।
প্রকল্পটির গভীর নলকূপগুলো শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে। যাদের বাড়িতে আগে থেকেই সুপেয় পানির আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন, ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক. এড. আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি জিয়াউল সরকার , আওয়ামী নেতা ও পাথর্শ্বী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার হোসেন বাবুল, সাপধরী ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম, চরপুটিমারি ইউপি সামছুজ্জামান সুরুজ মাস্টার, গোয়ালের চর ইউপি চেয়ারম্যান রহিম বাদশা,চিনাডুলী চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের বাড়ী, কাঠমার আওয়ামী নেতা কেরামত মাস্টার, ব্রহ্মোত্তরের আওয়ামী নেতা, দুদু মিয়া, নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা সাইদুর রহমান, পশ্চিম বলিয়াদহের ফারুক মেম্বার, চরগোয়ালিনীর রাজ্জাক মেম্বার, আওয়ামী নেতা, জসিম উদ্দিন, পলবান্ধার আওয়ামী নেতা শাহিনুর মাস্টার ও আক্রাম মাস্টার, চরপুটিমারিতে মন্ত্রীর মটর সাইকেল ড্রাইভার নুরুল আমিন, গাইবান্ধার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আনোয়ার হোসেন, গোয়ালেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী নেতা তোফাজ্জল হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের নাম উল্লেখযোগ্য।
এইসব নেতাকর্মীদের বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করে একদিকে যেমন অসম বন্টনের মাধ্যমে দলীয়করণ হয়েছে অপরদিকে সরকারি বিশাল অর্থের অপচয় হয়েছে। নেতারা ১০ বাড়ির সংযোগ একবাড়ির ১০ বাড়িতে না দিয়ে নিজেরা একাই ভোগ করছেন। সংযোগ দিয়েছেন ঘরের সামনে, পিছনে, ক্ষেতে, পালানে, এখানে সেখানে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে।
ব্যবহারের অনুপযোগীও হয়ে পড়েছে নলকূপ।
পক্ষান্তরে চরাঞ্চলের যেসব মানুষ আর্থিক সামর্থ্যহীনতায় গভীর নলকূপ স্থাপন করতে না পারায় আয়রন ও আর্সেনিকযুক্ত দূষিত পানি পান করছেন তাদেরকে রাষ্ট্রীয় এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
এছাড়া এ গভীর নলকূপ স্থাপন ও নির্মাণ কাজ অত্যান্ত অবহেলা ও দায়সারাভাবে করা হয়েছে। ৪ ফুট সাড়ে ৪ ফুটের প্লাটফর্ম কোথাও কোথাও করা হয়েছে ২ ফুট দেড় ফুট করে। বোরিং কাজে গাফিলতির কারণে এর থেকে উদগত পানি পান করা যায় না, গোসল করলে মাথার চুল নষ্ট হয়ে যায়, কাপড়চোপড় ধুইলে আরও ময়লা হয়ে যায়, পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ বলে জানিয়েছেন গোয়ালেরচর ইউনিয়নের পারভেজ, পলবান্ধার শাহিনুর মাস্টার ও আক্রাম মাস্টার এবং সুন্দর আলী, গোয়ালেরচরের আনোয়ার হোসেন, ইসলামপুরের শাহ আলমসহ আরও অনেকের পরিবার ও তাদের প্রতিবেশীরা।
এব্যাপারে মন্ত্রীর আত্মীয়, সিরাজাবাদের আমির হোসেন বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমার বাড়িতে যে গভীর নলকূপ স্থাপন হয়েছে। সে নলকূপ থেকে ১০টি সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যার ৪টি আমার ৪ ছেলে ব্যবহার করবে, ৪টি ছেলের বউরা ও ২টা আমরা বুড়া-বুড়ি ব্যবহার করব!
অপরদিকে বেনুয়ারচরের নুরুল আমিনের প্রতিবেশীরা বলেন, নুরুল আমিন আওয়ামী লীগ করে বলে তার বাড়িতে আগে থেকেই সাবমার্সিবল পাম্প ও সুপেয় পানির আধুনিক ব্যবস্থা থাকা সত্বেও তার বাড়িতই ১০টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আমরা চেয়েও দুই একটি সংযোগ পাইনি!
এব্যাপারে ইসলামপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গভীর নলকূপ বরাদ্দের তালিকা করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমার কিছু করার ছিল না।