প্রমত্তা পদ্মা এখন বালুচরে পরিণত

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
​এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদীর উত্তাল ভাব এখন আর নেই। বিবর্ণ হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম প্রধান এ নদী। উজানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এখন শুষ্ক মৌসুমে রাজশাহীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মার বিশাল অংশ বালুচরে পরিণত হয়েছে। এ পরিবর্তন পদ্মার সঙ্গে মিশে থাকা নদীপাড়ের মানুষের জীবন, জীবিকা আর পরিবেশকে হুমকিতে ফেলেছে।

যন্ত্রচালিত বাহনে বিশাল চর পাড়ি দিয়ে নদীর তীরে এসে যাত্রীদের নৌকায় চড়তে হয়। নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় নদীপাড়ের মৎস্যজীবীরা এখন কর্মহীন। অনেকেই পেশা বদলাচ্ছেন। ভারতের ফারাক্কায় বাঁধের কারণে উজানের পানির চাপ কমে যাওয়ায় গত কয়েক দশক ধরেই ধীরে ধীরে ছোট হচ্ছে এই প্রমত্তা নদীর আয়তন। এ বছর শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ করে পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে। যৌথ নদী কমিশনের তথ্য অনুসারে, চলতি জানুয়ারির প্রথম ৯ দিনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় ৬৫ হাজার ৭৫০ কিউসেক। গত বছর এই সময় ওই পয়েন্টে পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় ৮৫ হাজার ৩১৬ কিউসেক। পানি পরিমাপক দপ্তর, হাইড্রলজি পাবনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এ বছরও ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল বছরের প্রথম দিন থেকে পানি পরিমাপ করছে।’ তিনি জানান, এ বছর ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ অনেক কম থাকায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর শুরু থেকেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রায় ২০ হাজার কিউসেক কম প্রবাহিত হচ্ছে। তার দাবি, ‘গত বছরের তুলনায় কম পানি প্রবাহিত হলেও চুক্তি অনুযায়ী ঠিকমতোই পানি পেয়েছে বাংলাদেশ।’ সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এ বছর শুরু থেকেই নদীর বেশ কয়েকটি অংশ শুকিয়ে গেছে। মাইলের পর মাইল ধু-ধু বালুচর। রাজশাহীর সীমান্তবর্তী বড়কুঠি এলাকায় দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার প্রশস্ত নদীর ৪ কিলোমিটার এলাকা যন্ত্রচালিত বাহনে পাড়ি দিয়ে যাত্রীদের নৌকায় চড়তে হচ্ছে। প্রমত্তা পদ্মার বুকে বিস্তীর্ণ বালুচর সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, অটোরিকশা, হিউম্যান হলারসহ নানান রকম যানবাহনে পার হয়ে নদীর তীরে নৌকায় আসতে হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি। নদীর তীরবর্তী পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের রমজান আলী বলেন, ক্রমেই নদীর গতিপথ বদলেছে। এখন পুরো নদীর প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকায় চর। নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি অংশে অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ হওয়ায় নদীর ক্ষতি হয়েছে। নদীর চর থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলে নদীকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে। পদ্মাকে বাঁচাতে সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ‘পদ্মা আন্তর্জাতিক নদীর অংশ। এখানে পানির উৎস আমাদের হাতে নেই। প্রাকৃতিক কারণে পদ্মার যে বিপর্যয় হয়েছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে অপরিকল্পিত কাজকর্মে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *