মাদারীপুরের গর্ভপাতের ঘটনায় বিচার না পেয়ে ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
মাদারীপুরের শিবচরে সালিশ বৈঠকে ধর্ষণের ন্যায় বিচার না পেয়ে ৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্য ও অভিযুক্তসহ ১০ জনের নামে থানায় মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার। মাদারীপুরের শিবচরে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, অপরাধীদের ধরতে চলছে অভিযান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাবলাতলা গ্রামের হাজী কাইয়ুমউদ্দিন শিকদারকান্দি এলাকার চাঁনমিয়া মোল্লার মেয়ে ও বাবলাতলা জুনিয়র স্কুলের ৭ম শ্রেণির স্কুলছাত্রী হাফিজা আক্তারের সাথে প্রেম হয় প্রতিবেশী আবুল কালাম সরদারের বড় ছেলে পিয়ার সরদারের (২০)। দুজনের শারীরিক সম্পর্ক হলে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে পিয়ার বিয়ের আশ্বাস দিলে সম্প্রতি শিক্ষার্থীকে গর্ভপাতও করানো হয়। এরপর পিয়ার শুরু করে টালবাহানা। বিষয়টি নিয়ে পিয়ারের পরিবারকে জানালে ৭ম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। পরে বেশ কয়েকবার মেয়েটির পরিবার বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চালায়। শেষমেশ গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশি রফি সুন্সির বাড়ির উঠানে এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় মাদবর উজ্জল খান, তাজেল মাদবর, জাহাঙ্গীর খাঁসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অভিযুক্ত পিয়ার বিদেশ (ইটালী) যাবার প্রস্তুতি নেয়ার কারণে ঘটনা অন্যখাতে নিতে মেয়েটির সাথে পিয়ারের ছোট ভাই আলী সরদারের সাথে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সালিশকারীরা। বিয়ে না হলে অভিযুক্তের ১০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তর পরেই সালিশ বৈঠকেই দুই পক্ষের হট্টগোল শুরু হয়। পরে সেখান থেকে চলে যান সালিশকারীরা। এই ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থী ধর্ষণের ন্যায় বিচার না পাওয়ায় অপমানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গলায় রশিদ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এখন পরিবারটি ন্যায় বিচারের দাবী করছেন। নিহত মেয়েটির মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণী পাস করে ৭ম শ্রেণীতে উঠেছে। আমরা ভাবছিলাম মেয়ে পড়াশোনা করে বড় হবে। কিন্তু পিয়ারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হলে গত বছর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায় আমার মেয়ে। আমরা গ্রামের মানুষের কাছে বিচার দিছিলাম। কিন্তু এইডা আমাদের গ্রামের মাদবররা কী বিচার দিলো? আমি আমার মেয়েকে হারানোর ঘটনায় বিচার চাই। একই ধরনের কথা জানালেন মেয়েটির দাদা সাইদুল মৃধা। তিনি বলেন, আমার নাতনি কে এভাবে মরতে হবে আমরা কোনদিন ভাবিনি। আমরা সরকারের কাছে এই ঘটনার ন্যায় বিচার দাবী করছি।
এদিকে সালিশ বৈঠকের আয়োজনে অংশ নেয়ার কথা অকপটে স্বীকার করলেন স্থানীয় সালিশকারী ও মাদবররা। সালিশকারী উজ্জ্বল খান বললেন, ‘সালিশ করতে গিয়ে আমরা জেনেছি, মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল। এবং তা কয়েক মাস আগে এবোরশন করিয়েছে। তাই আমরা মেয়েটিকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।’-এর বেশি কিছু তিনি বলতে আর রাজি হননি।
এই ঘটনায় মেয়েটির বড় ভাই নাসির মোল্লা বাদী হয়ে শিবচর থানায় প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্য ও অভিযুক্ত পিয়ারসহ ১০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে। -এই বিষয়ে নাসির মোল্লা বলেন, ‘আমি আমার বোনকে হারিয়ে ফেললাম। গ্রামের মানুষরা সবাই মিলেও আমার বোনটিকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে দিতে পারলো না। এখন আমি ন্যায় বিচার পেতে থানায় মামলা দায়ের করেছি।
মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.আকতার হোসেন বলেন, ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত পিয়ার হোসেন। মামলার অন্য আসামীদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে জেলা সদর হাসপাতালে নিহতের মরদেহ ময়না তদন্ত করা হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।