খুলনায় কেএমপি’র তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর আজিমসহ আটক ৫
খুলনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মো: নূর আজিম(২৮)সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছেন গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অন্যান্য আসামিরা হচ্ছেন মো: রিয়াজুল ইসলাম ওরফে দাদা মিয়া (৩৫), ফয়সাল আহমেদ দীপ (২৫), মোহাম্মদ রানা তালুকদার (২৯) ও নাঈম ওরফে মো: কামরুজ্জামান নাঈম (২৫)। গতকাল বুধবার ( ১ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় কেএমপি’র ডিবি পুলিশের একটি টিম ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করেন। কেএমপি ডিবি পুলিশ জানায়, ডিবি’র ওসি মো: তৈমুর ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা মহানগরীর গুলশান, বাড্ডা, খিলক্ষেত, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে খুলনা মহানগরীর দক্ষিন টুটপাড়া ৮/১ মহিরবাড়ী মোড় দক্ষিন টুটপাড়া ইষ্ট সার্কুলার রোড এলাকার বাসিন্দা শানু মহরীর ছেলে খুলনায় কেএমপি’র তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মো: নূর আজিম, নিরালা কাশেমনগর এলাকার বাসিন্দা মো: বাবুল মাতুব্বর এর পুত্র মো: রিয়াজুল ইসলাম ওরফে দাদা মিয়া, দৌলতপুর থানাধীন দত্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোশারেফ হোসেনের পুত্র ফয়সাল আহমেদ দীপ, খালিশপুর থানাধীন উত্তরকাশিপুর পদ্মা গেট এলাকার বাসিন্দা মো: সামছুল হকের পুত্র মোহাম্মদ রানা তালুকদার এবং বঙ্গবাসী পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা মো: জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ফকরুলের পুত্র নাঈম ওরফে মো: কামরুজ্জামান নাঈমকে আটক করেন। গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে খুলনায় পৌছাতে দুপুর ৩টা বেজে যায়। ডিবি’র ওসি তৈমুর ইসলাম আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত নূর আজিম কেএমপি’র তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাকে গ্রেফতারের জন্য ইতিমধ্যে পুরস্কার ঘোষনা করেছিল কেএমপি কমিশনার স্যার’। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত অপর আসামি মো: রিয়াজুল ইসলাম ওরফে দাদা মিয়া নগরীর পূর্ববানিয়াখামা এলাকার বাসিন্দা দাদো মিজানের আপন খালাতো ভাই। রিয়াজুল পূর্ববানিয়াখামার এলাকার আল-আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। রিয়াজুলের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
কে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর আজিম : ২০১৭ সালের দিকে খুলনায় কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে আসা নুর আজিম। গত ৬ বছরে কিশোর গ্যাং আজিম বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা থানায় হত্যা মামলা দুটি, মাদক মামলা ১০টি, হত্যাচেষ্টা মামলা ১৭টি, দ্রুত বিচার আইনে একটি, মানব পাচার একটি, নারী ও শিশু নির্যাতন একটি, রূপসা থানায় একটি, অস্ত্র আইন একটি ও একটি ডাকাতি মামলা। শুধু খুলনা শহরে নয়, ভাড়াটে হিসেবে বাইরে গিয়ে মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায় আজিম বাহিনী। বাগেরহাটের রামপাল থানায় মাদক মামলা রয়েছে আজিম বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, নূর আজিমের বাড়ি দক্ষিন টুটপাড়া ইষ্ট সার্কুলার রোড এলাকায়। নূর আজিমের বাবা শানু মুহুরি একজন আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ২০১৭ সালের দিকে কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে আজিম। নগরীর লবণচরা এলাকায় ওই কিশোর গ্যাং বহু অপরাধে জড়িত ছিল। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মহানগর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছত্রছায়ার কারণে ওই সময় আজিমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে দিনে দিনে আরও বেপরোয়া ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা ভয়ে মামলাও করতে যাননি। এলাকাবাসী জানায়, নগরজুড়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতেই ওই কাউন্সিলর তৈরি করেন কিশোর গ্যাং, যার নেতৃত্বে ছিলেন নূর আজিম। ছোট ছোট অপরাধ দিয়ে শুরু হলেও এখন কথায় কথায় খুন-খারাবিতে জড়িয়ে পড়ছে আজিম বাহিনী। খুলনাজুড়ে সক্রিয় থাকলেও নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ আজিম বাহিনীর। বিশেষ করে নগরীর টুটপাড়া, চানমারী, লবণচরা, বান্দা, আশি বিঘা, নিজ খামার, রিয়া বাজার ও সোনাডাঙ্গা এলাকায় আজিমের মুখের কথাই আইন। এই এলাকাগুলো সরাসরি দেখভাল করে নূর আজিমের ছোট ভাই সাগর ও বাহিনীর সদস্য নাহিদ। এই বাহিনীর অস্ত্র দেখাশোনার দায়িত্বও সাগরের ওপর। সাগরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে নাহিদ। ২০২২ সালে ২৯ অক্টোবর বিদেশি অস্ত্র, গুলিসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল নাহিদ। আজিম গ্রুপের প্রধান শুটার হিসেবে কাজ করে বিকুল। তার নামে খুলনার বিভিন্ন থানায় অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। বিকুল ছাড়াও এই বাহিনীতে শুটার হিসেবে আছে মাসুদ ও মিরাজ। দুজনের নামেই একাধিক হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। গত ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর রাতে রাতে লবণচরা থানা এলাকায় ঘের ব্যবসায়ী সিহাব ও শাকিলকে প্রকাশ্যে গুলি করা হয়। তারা অস্ত্রধারীদের মধ্যে কালা লাভলু নামে পরিচিত একজনকে চিনতে পারি। সে আজিম বাহিনীর সদস্য এবং পেশাদার খুনি।’ এর আগে ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা খেলার মাঠে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় সিয়ামকে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। সিয়ামকে তাদের বাহিনীতে যোগ দিতে বলেছিল নূর আজিমের সহযোগীরা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে ওই বাহিনীর সদস্যরা সিয়ামকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পরদিন খুলনার কৈয়া বাজার এলাকা থেকে সিয়ামের সহপাঠী রায়হান রাব্বি, আবু সাইদ ও ছোট রনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেসময় এরা সবাই ছিল নূর আজিমের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।
এদিকে গ্রেফতারকৃত মো: রিয়াজুল ইসলাম ওরফে দাদা মিয়া নগীরর পুর্ববানিয়াখামার এলাকায় আল-আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। রিয়াজুল ওই এলাকার বাসিন্দা দাদো মিজানের আপন খালাতো ভাই। এই মিজানের বিরুদ্ধেও আল-আমিন হত্যা মামলায় নাম রয়েছে।
রিয়াজুলকে খুলনায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসলে পূর্ব বানিয়াখামার এলাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত আল-আমিন এর ছোট বোন রুবি ডিবির কার্যালয়ে আসেন। ভাইয়ের হত্যাকারীদের সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে রুবি এ প্রতিবেদককে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডনের নেতৃত্বে রিয়াজুল ও দাদো মিজান মিলে আমার ভাই আল-আমিনকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, রিয়াজুল হচ্ছে পূর্ববানিয়াখামারের আরেক সন্ত্রাসী দাদো মিজানের আপর খালাতো ভাই। তাদের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ ছিলো। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তারা যেসব অপরাধ কর্মকা- চালিয়েছে তা ভাষা প্রকাশ করার মতো না। ওই সময় স্ত্রানীয় কাউন্সিলর ডন তাদেরকে সেল্টার দিতো। যার কারণে সবাই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পেতো না। তিনি বলেন, তার ভাইয়ের হত্যা মামলার আসামি পূর্ব বানিয়াখামার বুড়ি বাগান নামক এলাকার বাসিন্দা নজু গাজীর পুত্র মনি, নাছিরের পুত্র তারেক ওরফে কিলার তারেক, ইউসুফ গাজীর পুত্র আতা গাজী ওেেফ আতা, নজরুল শিকদারের দুই ছেলে ইব্রাহিম ও ইসমাইল, হৃদয় গাজীসহ আরো আসামিরা রয়েছেন। আল আমিনের বোন রুবি বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডনসহ ১০-১২ জনের নাম উল্লেখ অজ্ঞাতনামা আরোও কয়েকজনকে আসামি করে আমার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন আদারতে মামলা দায়ের করেন।