নগরীতে বাসা বাড়িতে রমরমা জুয়ার আসর : অভিযানেও থেমে নেই
সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা:
# ডিবি’র অভিযানে নগদ টাকা ও জুয়ার সরঞ্জামসহ আটক ৫ #
খুলনা মহানগরীতে বাসা বাড়ি ও হোটেল-ক্লাবে প্রতি রাতে বসছে জুয়ার আসর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চুনোপুঁটিরা গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় রাঘব-বোয়ালরা। গ্রেফতারের পর জামিন নিয়ে আবারও জড়িয়ে যাচ্ছে জুয়ার নেশায়। প্রতিরাতে নগরীতে অন্তত ২০-২৫টি স্থানে বসছে জুয়ার আসর। গ্রেফতার এড়াতে বাসা বাড়িতেও পরিচালনা হচ্ছে জুয়া। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল ও ক্লাবেও জুয়ার আসর বসছে। প্রতিরাতে জুয়ার আসরে বসেন নিম্ন আয়ের মানুষ। পেশায় অনেকে দিনমজুর। আর কিছু আসরে বসেন বড় ব্যবসায়ী, ঠিকাদার এমনকি সরকারি চাকরিজীবীরাও। কথিত রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয় ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এবং কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজ করে এই জুয়ার আসরগুলো পরিচালিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় নগরীর দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বপাশা এলাকায় ডিবি পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলার সরঞ্জামসহ ৫ জন আটক করেছেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে জুয়া খেলার ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা জব্দ করা হয়। দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রোড সংলগ্ন জনৈক টিপু সুলতানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। কেএমপি’র ডিবির ওসি মো: তৈমুর ইসলাম এর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে মহেশ্বরপাশা শিকারীর মোড় এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক হাওলাদারের পুত্র জাকির হোসেন (৩৮), মহেশ্বরপাশা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা মৃত ওয়াজেদ আলী ফকিরের পুত্র মো: রুহুল আমিন (৪৯), মৃত মানিক হাওলাদারের পুত্র মো: রফিক হাওলাদার (৪০), নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র মো: সাব্বির রহমান (৪২) এবং দৌলতপুর মধ্যডাঙ্গা স্কুল মাঠ এলাকার বাসিন্দা মো: শওকত এর পুত্র মো: রাকিব (৪২)।
কেএমপি’র ডিবির ওসি মো: তৈমুর ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা উক্ত স্থানে দীর্ঘদিন যাবত জুয়া খেলার আসর বসিয়ে থাকার কথা স্বীকার করেন। গ্রেফতারকৃত মধ্যে এক নম্বর আসামীর মো: জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ৫টি জুয়া, চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে। সে এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি হিসেবে গুঞ্জন রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় ১৮৬৭ সালের জুয়ার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, জাকির হোসেন খুলনা মহানগরী জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কমিটিতে তার পদ রয়েছে।
এর আগে গত জুলাই মাসে নগরীর নিরালা আবাসিক ১৮ নং রোডের ২৫ নং বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৪জন জুয়াড়ীকে আটক করেছিল পুলিশ। খুলনা সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান জুয়ার খেলার সরঞ্জামসহ নগদ এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এর আগে ২০২৩ সালে ৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় ডিবি পুলিশের একটি টিম নগরীর মুন্সিপাড়া ৩য় গলির এলাকার বাসিন্দা জনৈক মো: ফারুক হোসেন সাচ্চুর বাড়ির ভাড়াটিয়া ঘরে অভিযান চালিয়ে ৩০ সেট জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও নগদ ৭৬ হাজার ৬০০ টাকাসহ ১০ জনকে আটক করেছিল। আটককৃতরা হচ্ছে মোঃ বাবুল হাওলাদার, মোঃ জিয়াউল ইসলাম, মোঃ রায়হান গাজী, মোঃ শহিদ শেখ, মোঃ শেখ মাসুম, মোঃ মোমরেজ সরদার, মোঃ ফারুক চৌধুরী, মোঃ শেখ শহিদুল ইসলাম লিটু, মোঃ কামরুজ্জামান ও মোঃ মাজিদুল ইসলাম। অভিযান দেখে যাচ্ছে বেশির ভাগই জুয়ারীরা বাসা বাড়ি ভাড়া করে এই রমরমা জুয়ার আসরগুলো বসাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হলেই বন্ধ হয় জুয়ার আসর ; সব পক্ষ ম্যানেজ করে পুনরায় পুরোদমে চলে সর্বগ্রাসী জুয়া। নগরীর দৌলতপুরে ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ারীসহ টাকা উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছিল। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই সময় কয়েকজনকে আটক করেছিল।
নগরীর এক ব্যবসায়ী জুয়া খেলতে খেলতে নিজের সবকিছুই শেষ করেছেন। এখন ব্যবসাও বন্ধ। বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, জুয়ার নেশায় আমি শেষ হয়ে গেছি। নিজের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িটাও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। আজ হেরেছি, কাল জিতবÑ এই ভেবে খেলতে খেলতে আমি একেবারে শেষ হয়ে গেছি। তিনি বলেন, যারা আসর পরিচালনা করেন, তাদের সঙ্গে থানার কারও না কারও যোগাযোগ আছে। থানার ওই লোককে বলা হয় ক্যাশিয়ার। বড় কর্মকর্তার নাম বলে ওই কথিত ক্যাশিয়ার প্রতিদিন টাকা নিয়ে যান। থানা থেকে কেউ অভিযানে আসতে চাইলে আগাম ফোন করে জানিয়ে দেন। সেদিন কেউ বসে না।