কনস্টেবলের অস্ত্র নিয়ে গুলি করেন এডিসি সাদেক

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলায় রিমান্ডে গুলি করার কথা স্বীকার করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) সাদেক কাউসার দস্তগীর।
তদন্তকারী কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই দুপুর ২টার দিকে বিএনপির মিছিলে তার গানম্যান কনস্টেবল মোজাহিদের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে ৪৫ ডিগ্রি কোনে (এঙ্গেলে) ওপর দিয়ে গুলি ছোড়েন।
তবে কাউকে হত্যার উদ্দেশে তিনি গুলি ছুঁড়েননি। এমন তথ্য নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক মোহাম্মদ মোরসালিন বলেন, সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার বিকেলে সাদেক কাউসার দস্তগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পিবিআই এর +হাম্মদ মুরসালিন আরও বলেন, রিমান্ডে ঘটনার দিনের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ সাদেক কাউসার দস্তগীরকে দেখানো হলে তিনি গুলি ছোড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গুলি ছুড়েছেন, হত্যার জন্য নয়।
সাবেক এডিসি দস্তগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন কোতোয়ালি থানার সাবেক সহকারী কমিশনার (এসি) মিজানুর রহমান ফোর্সকে গুলি করার আদেশ দিয়েছিলেন। ওই সময় কনস্টেবলের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে ৪৫ ডিগ্রি কোনে গুলি ছোড়েন। তবে কাউকে হত্যার উদ্দেশে গুলি ছোড়েননি।
গত ১৯ ডিসেম্বর এসএমপির সাবেক অতিরিক্ত উপ কমিশনার সাদেক কাওসার দস্তগীরের ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ওইদিন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মদ মোরসালিন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেন এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওইদিন সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হলে জনরোষের কবলে পড়েন।
এর আগে ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর কর্মস্থল থেকে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান।
গত ১৯ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি ও দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। ঘটনার পর একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ঘটনার দিন ১৯ জুলাই দুপুর ২টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির মিছিলে পেছন থেকে গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। ওই সময় সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ কমিশনার সাদেক কাওসার দস্তগীর এক কনস্টেবলের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুঁড়েন। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে গুরুতর আহত সাংবাদিক তুরাব ওইদিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তার দেহে ৯৮টি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয় বলে জানান চিকিৎসক। এ ঘটনায় পুলিশের তরফ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা নেওয়া হয়নি।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ (জাবুর)। মামলাটি কোতোয়ালি থানাকে রেকর্ড করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ক্রাইম, উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউছার, উপ কমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মামলায় আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
ঘটনার পর অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ক্রাইম, উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউছার, উপ কমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখকে সিলেট থেকে বদলি করা হয়।
গত ৮ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর এই মামলার নথিপত্র কোতোয়ালি থানা পুলিশ পিআইবিকে বুঝিয়ে দেয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মোরসালিন গত ১৭ নভেম্বর রাতে তুরাব হত্যা মামলার আরেক আসামি কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। পরদিন আদালতে তার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে শুনানি শেষে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করলে বিচারকের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *