কুষ্টিয়ায় কৃষক দলের নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ভূমিহীনদের
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
কুষ্টিয়ায় কৃষক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও ভূমিহীনদের উচ্ছেদচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে আজ বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের ত্রিমোহনী মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক সুমন সরকারের নেতৃত্বে পৌরসভার বারখাদা হঠাৎপাড়ায় বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা চলছে। বারখাদা মৌজায় ৭ দশমিক ৩৬ একর (প্রায় ২২ বিঘা) সরকারি সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে ২১ বিঘাতে ভূমিহীনেরা ৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। বাকি ১ বিঘা জমিতে একটি মসজিদসহ ফাঁকা জায়গা রয়েছে। আজ সকালে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক সুমন সরকারের নেতৃত্বে ৩০-৪০টি মোটরসাইকেলে তাঁর লোকজন এসে মসজিদসহ ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। একই সঙ্গে পৌরসভার সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে পিলার পুঁতে সীমানা নির্ধারণ করে দেন তাঁরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে ত্রিমোহনী মোড়ে ভূমিহীনেরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে শতাধিক নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, এমনকি শিশুরাও অংশ নেয়। তাঁরা ব্যানার হাতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকের হাতে ঝাড়ুও ছিল। পরে কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
ভূমিহীন ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘বিন্দুমাত্র জায়গায় নেই আমার। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে কপালে জুটেছে সরকারি এই জায়গাটুকু। সেটিও দখল করতে এসেছেন কৃষক দলের নেতাসহ লোকজন। কেন আমাদের উচ্ছেদ করবেন?’
হঠাৎপাড়ায় বসবাসরত শিমুল হোসেন বলেন, কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক সুমন সরকার, সুজন সরকার, ছানোয়ার, তাজ ও মাহাবুলের নেতৃত্বে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছে এই জায়গা জবরদখলের। আজ সকালে ৩০টির বেশি মোটরসাইকেলে এসে জোর করে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে যায়।
উজ্জ্বল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বারখাদা ত্রিমোহোনী হঠাৎপাড়াতে ৪০ বছর ধরে বসবাস করছি সরকারি জায়গায়। আমার মতো আরও ২০০ ঘর এখানে রয়েছে। এ ঘরগুলো উচ্ছেদ করে দখলের চেষ্টা চলছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভূমিহীন একাধিক ব্যক্তি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও তাঁর চাচাতো ভাই আতাউর রহমান মিলে পৌরসভার এই জায়গা দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখনো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এখানকার বসবাসরত পরিবারগুলো। সরকার পরিবর্তনের পর আবার এখন যাঁরা ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন, তাঁরা দখল নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মূলত মসজিদসহ ফাঁকা জায়গাটুকু দখল নিতে পারলে এখানে বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদে দখলদারদের সুবিধা হবে। এখানে পরিবারগুলো নিজেরাই বালু ফেলে মসজিদটি নির্মাণ করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে কুষ্টিয়া জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক সুমন সরকার বলেন, আজ সকাল থেকে তিনি দলীয় অনুষ্ঠানে খোকসায় অবস্থান করছেন। তিনি বা তাঁর দলের কোনো লোক ভূমিহীনদের জায়গা দখল করতে যাননি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে সড়ক অবরোধের বিষয়টি জানতে পারি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, এখানে ২২ বিঘার মতো পৌরসভার জমি রয়েছে। সেখানে ভূমিহীনেরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। সেই জমি কে বা কারা দখলের চেষ্টা করেছেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে ভূমিহীনেরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন।’