শ্রমিকলীগ থেকে বহিষ্কৃত আলোচিত সেই তুফান সরকার গ্রেফতার
বগুরা প্রতিনিধি,
বগুড়ার বহুল আলোচিত শহর শ্রমিকলীগের বহিষ্কৃত (আহ্বায়ক) তুফান সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের একটি দল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে শহরের চকসুত্রাপুর কসাইপাড়ার বাড়ি থেকে ১৪ মামলার আসামি ও দুদকের মামলায় ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক এ আসামিকে গ্রেফতার করে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা ডিবির ওসি ইকবাল বাহার জানান, তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।
পুলিশ জানায়, বগুড়া শহর শ্রমিকলীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকার শহরে চকসুত্রাপুর কসাইপাড়ার মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। তিনি আলোচিত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকারের ছোট ভাই। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। এক কলেজ ছাত্রীকে বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ ও মা-সহ তাকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় ২০১৭ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন। মামলাটি মীমাংসা করার পর জামিনে ছাড়া পান।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা হলে তুফান সরকার আত্মগোপন চলে যান। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় পৃথক ধারায় স্পেশাল জজ আদালত গত ২৭ নভেম্বর পলাতক এই আসামিকে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানা অনাদায়ে তাকে ৯ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তথ্য গোপন করায় এক কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই তুফান সরকার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কলেজে ভর্তিচ্ছু এক ছাত্রীকে ভাড়া বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নিজ বাড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী ও তার মাকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। তাদের লোহার রড দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। বর্বরোচিত এ ঘটনায় শুধু বগুড়ায় নয়, সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। তাদের বিচারের দাবিতে মিছিল, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।
২৯ জুলাই ছাত্রীর মা বগুড়া সদর থানায় তুফান ও তার স্ত্রী তাসমিন রহমান আশা, আশার বোন সাবেক পৌরসভার কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি, শাশুড়ি লাভলী রহমান রুমি, তুফান বাহিনীর সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, মুন্না, আলী আজম, মেহেদী হাসান রূপম, সামিউল হক শিমুল, এমারত আলম খান জিতু বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পৃথক মামলা করেন।
২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আলোচিত এ ধর্ষণ মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছিলেন। পরে তুফান ছাড়া সব আসামি জামিনে ছাড়া পান। সব আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। অজ্ঞাত কারণে ভুক্তভোগী মা-মেয়ে আপস করেন। ফলে তুফান সরকার প্রায় সাড়ে চার বছর পর জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান। বাদী মামলার আপস করায় মামলাগুলো ঢিমেতালে চলছে।