প্রাইমারিতে চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকার বাণিজ্য।
ব্যুরো চিফ, খুলনা: গণি মিয়ার নিজের জমি নেই, সে অন্যের জমি চাষ করে। তিনি খুলনার সাবেক সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কথা বলেই বক্তৃতা করে থাকেন। সাতক্ষীরার আশাশুনির শেখ আব্দুল গণি অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে প্রাইমারিতে চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকার অর্থ বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ আছে। তিনি শিক্ষকদের বিভিন্ন বিভাগীয় মামলার নিষ্পত্তি করতে অবৈধ লেনদেন করেন। শূন্যপদে শিক্ষক বদলিতে অবাধে ঘুষ গ্রহণ করেন। সম্প্রতি একটি বিভাগীয় মামলার ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণ না করে মেডিকেল ছুটিতে আছেন।
শেখ আব্দুল গণি ২০০০ সালের এপ্রিলে থানা শিক্ষা অফিসার পদে (টিও) যোগদানের পর থেকেই নানাবিধ বিতর্ক রয়েছে। বেশী বেপরোয়া হয়েছেন ২০০৯ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের পরিচয়ে মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙিয়ে সকল অপকর্ম আড়াল করেছেন। তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি পেলেন?
শেখ আব্দুল গণি 14/09/1998 প্রাথমিকের থানা শিক্ষা অফিসার পদের সার্কুলেশনে আবেদন করেন। এই পদে আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ০২/১১/১৯৯৮। আবেদনের সময় মুক্তিযুদ্ধের সনদ সংক্রান্ত কোন তথ্য তার কাছে ছিল না। এই পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। তার পিতা শেখ এমান আলী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাময়িক সনদ পান ২৩/০৯/২০০৪। বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় মুক্তিযোদ্ধা তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০০৫ সালের ২৭ জুন। তাহলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের ২০০০ সালের ৪ এপ্রিলের প্রজ্ঞাপনে শেখ আব্দুল গণি মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের ১১১ নম্বর তালিকায় অন্তভূক্ত হয় কিভাবে?
শেখ আব্দুল গণি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবী নগরে চাকরি জীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে খুলনার বটিয়াঘাটায় চাকরি করার সময় তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বিভিন্ন বিভাগীয় মামলার নিষ্পত্তি করতে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে তাকে ডুমুরিয়া উপজেলায় বদলি করা হয়। সেখানে ভাইয়ের স্ত্রীর মামলায় দীর্ঘ দিন জেল খাটেন। তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। খুলনা-৫ আসনের সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের সহযোগিতায় আরারও চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দাকোপ উপজেলায় যোগদান করে আবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। দাকোপের এনসি ব্লু বার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শূন্যপদে অর্থের বিনিময়ে পল্লব বিশ্বাস নামের একজন জুনিয়র শিক্ষককে যোগদান করান। এই ঘটনায় ফেরদৌসী খানম নামের একজন সিনিয়র শিক্ষক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ২০১৬ সালে তাকে বাগেরহাটে বদলি করা হয়। বাগেরহাটে তার বিরুদ্ধে প্রাইমারিতে চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকার অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন ডুমুরিয়ার আক্তারুজ্জামান নামের একজনের কাছ থেকে তিনি ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। তার ভাই বাগেররহাটের জেলা জজে চাকরি করেন। বহু টাকা লেনদেন করেও আশাশুনির কমলেশ চন্দ্র ঢালীর প্রাইমরি চাকরি হয়নি। চাকরি আশায় অনেকেই তার কাছে টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন।
২০২২ সালের অক্টোবরে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারে পদোন্নতি নিয়ে তিনি খুলনায় যোগদান করেন। খুলনার তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বিভাগীয় মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। ইতোমধ্যে তার নামে বাগেরহাটের দুইজন এটিও বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলার ব্যক্তিগত শুনানিতে তিনি হাজির হননি। চলতি মাসে তাকে যশোরে বদলি করা হয়েছে।