অস্ত্র-গুলির ছড়াছড়ি
ব্যুরো চিফ, খুলনা: একের পর এক অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে সর্বত্রই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। নানা অজুহাতে সমাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে অপরাধীরা। হামলা করছে সাধারণ মানুষের উপর। মাঝে মাঝেই ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়া মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। সন্ত্রাসীদের নিশানা থেকে বাদ যাচ্ছেন না খোদ পুলিশ সদস্যরাও। একের পর এক ঘটনায় উৎকণ্ঠা-উদ্বিগ্নতা ভর করছে সব শ্রেণির মানুষের মাঝে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচুর অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এখনো উদ্ধার হয়নি পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লুণ্ঠিত অস্ত্র-গোলাবারুদ। আবার চিহ্নিত অপরাধীদের অনেকেই বর্তমানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের আশ্রয়ে রয়েছেন। তাই পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা স্বাভাবিক চেহারায় না ফেরা পর্যন্ত স্বস্তি ফিরবে না সমাজে। পুলিশ বাহিনী পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। শুধু নির্বাচন নয়, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ বাহিনী। আবার সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের জড়তা কাজ করছে। এ কারণে কোনো এলাকায় সেনাবাহিনী গেলেও সেখানকার মানুষ ধাক্কাধাক্কি করছে তাদের সামনে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত হবে আইনের আলোকে তাদের আরও কঠোর হওয়ার। কারণ, অবস্থা অনেক পাল্টেছে। সমন্বিত অভিযান জরুরি হয়ে পড়ছে। ‘অপরাধী যেই হোক, অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না’ সমাজে এ বার্তাটা দেওয়া উচিত।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িসহ পুলিশের নানান স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। গোলাবারুদ লুট হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড ও বিভিন্ন বোরের গুলি। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযান শুরু হয়। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই অভিযানে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৫১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৬টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর শনিবার দিবাগত রাত ৮.৩০ টার দিকে খুলনা রূপসা উপজেলার জয়পুর বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন সাব্বির হোসেন (২৫)। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন অজ্ঞাত ব্যক্তি সেখানে আসেন। তাদের দেখে সাব্বির দৌড় দেন। তখন দুর্বৃত্তরা ধাওয়া করে তাকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়ে। লুটিয়ে পড়েন সাব্বির। স্থানীয় লোকজন দুর্বৃত্তদের ধাওয়া দিলে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ সাব্বির জয়পুর গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে। তিনি বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।