১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টার মুখোশ খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, কূটনীতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রয়াত জে. এন. দীক্ষিতের লেখা বইয়ের উদ্ধৃতির তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকার আজ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টার মুখোশ খুলে দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুকের একটি পোস্টে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনাবলীর ওপর দীক্ষিতের পর্যবেক্ষণ উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘আমরা ১৯৭১ সালে আমাদের গৌরবময় বিজয় উদযাপন করি; আমরা উদযাপনের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ করি।’

‘ইতিহাসের তথ্য’ শিরোনামে মন্ত্রণালয়ের পোস্টে পুনর্ব্যক্ত করা হয় যে, একটি সুদীর্ঘ সংগ্রাম এবং নয় মাসের নৃশংস যুুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম, স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পোষ্টে দীক্ষিতের ‘লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড : ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশন্স’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ যুদ্ধশেষের আত্মসমর্পণের বিস্তারিত বিবরণ উদ্ধৃত করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের পোস্টে দীক্ষিতের বইয়ের নিম্মোক্ত অংশগুলি উল্লেখ করা হয় : ‘আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের একটি বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল জেনারেল এমএজি ওসমানীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা এবং বাংলাদেশ থেকে জয়েন্ট কমান্ডের কমান্ডার হিসেবে তাকে স্বাক্ষরদাতা হিসেবে দেখাতে না পারা। তার অনুপস্থিতি ব্যাখ্যা করার আনুষ্ঠানিক অজুহাত ছিল যে তার হেলিকপ্টারটি উড্ডয়ন করেছিল কিন্তু আত্মসমর্পণের সময়সূচীর জন্য সময়মতো ঢাকা পৌঁছাতে পারেননি। কিন্তু ব্যাপক সন্দেহ ছিল যে তার হেলিকপ্টারটি বিপথে পাঠানো হয়েছিল যাতে তিনি সময়মতো ঢাকায় পৌঁছাতে না পারেন এবং অনুষ্ঠানের মনোযোগ যাতে কেন্দ্রীভূত হয় ভারতীয় সামরিক কমান্ডারদের দিকে। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক বিভ্রান্তি, যা ভারত এড়াতে পারত।’

ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ওসমানীর উপস্থিতি অনেক রাজনৈতিক ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সাহায্য করতে পারত, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাথমিক দিনগুলিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছিল।

মন্ত্রনালয়ের পোস্টটি শেষ করা হয়েছে এইভাবে: ‘আমরা ১৯৭১ সালে আমাদের গৌরবময় বিজয় উদযাপন করি; আমরা সত্যকে উদযাপন করি।’

মন্ত্রণালয়ের মন্তব্যগুলো বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক্স অ্যাকাউন্টের (আগের টুইটার) পোস্টের বিরূদ্ধে জনসাধারণের ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সাথে মিলে যায়। মোদির বক্তব্য বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমালোচনার মুখে পড়ে।

মোদি তার পোস্টে লিখেছেন, ‘আজ, বিজয় দিবসে, আমরা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সাহসী সৈন্যদের সাহস এবং আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই। তাদের নিঃস্বার্থ উৎসর্গ এবং অটল সংকল্প আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। এই দিনটি তাদের অসাধারণ বীরত্ব এবং তাদের অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের জাতির ইতিহাসে গভীরভাবে গেঁথে থাকবে।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাগণ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মোদির মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এই জয়ে ভারত ছিল কেবল মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’

নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশের মূল ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলাম এবং আমরা তা শেষ করেছি।’ যা নিউ এজ রিপোর্ট করেছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহও ফেসবুক পোস্টে মোদির মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এটা ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ। এটা ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ। কিন্তু মোদি তার বর্ণনায় বাংলাদেশের অস্তিত্বকে উপেক্ষা করে এটাকে শুধুমাত্র ভারতের যুদ্ধ এবং তাদের অর্জন বলে দাবি করেছেন। ভারত যখন এই স্বাধীনতাকে তাদের কৃতিত্ব বলে দাবি করে, তখন আমি এটাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি। ভারতের এই হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অনিবার্য। আমাদের এই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *