বিচারকদের ফেসবুক ব্যবহার করাই উচিত নয়: ভারতের শীর্ষ আদালত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিচারকদের ফেসবুক ব্যবহার করাই উচিত নয়। একটি মামলার ক্ষেত্রে এমনটাই মন্তব্য করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শুধু ফেসবুক নয়, কোনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বিচারকদের থাকা উচিত নয়। বিচারকদের জীবন হওয়া উচিত সন্ন্যাসীদের মতো, মনে করে ভারতের শীর্ষ আদালত।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের দু’জন নারী বিচারপতিকে বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি অদিতিকুমার শর্মা এবং বিচারপতি সরিতা চৌধুরিকে বরখাস্ত করা হয়। তারা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানান। সেই মামলাতেই ওই দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে তাদের করা একটি ফেসবুক পোস্ট আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংহের বেঞ্চ ওই দুই বিচারপতির উদ্দেশে মন্তব্য করে, ‘‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি খোলামেলা জায়গা। আপনাদের সন্ন্যাসীর মতো জীবন যাপন করতে হবে, আর কাজ করতে হবে ঘোড়ার মতো। বিচারক এবং বিচারপতিদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। একদমই তাদের ফেসবুকে যাওয়া উচিত নয়।
’’
কোনও মামলায় বিচারকদের ব্যক্তিগত মতামত সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়, মৌখিক পর্যবেক্ষণ আদালতের। কারণ, সে ক্ষেত্রে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যে মামলার রায় এখনও ঘোষিত হয়নি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেই সেই রায় সম্পর্কে ইঙ্গিত পেয়ে যেতে পারেন সাধারণ মানুষ। বরখাস্ত হওয়া বিচারপতিদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে আইনজীবী মামলা লড়ছিলেন, তিনিও শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত হয়েছেন। জানিয়েছেন, মামলা সংক্রান্ত কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা উচিত নয় কোনও বিচারকের।
এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কিছুটা সংযত হয়ে থাকতে হবে, মনে করেন তিনিও।
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর ছয় জন নারী সিভিল বিচারককে বরখাস্ত করেছিল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। তাঁদের কাজের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে চলতি বছরের ১ অগস্ট তাঁদের মধ্যে থেকে চার জনকে আবার ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় উচ্চ আদালত। দু’জনকে আর ফেরানো হয়নি। তারা হাই কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন।
আবেদনকারী বিচারপতি অদিতি শর্মা সম্পর্কে হাইকোর্টের বক্তব্য, ২০১৯-২০ সালের পর থেকে তার কাজে ঢিলেমি এসেছে। একেবারেই আশানুরূপ হয়নি বিচারপতি হিসাবে তার কাজ। মামলা নিষ্পত্তির হারও কমেছে। ওই বিচারপতি আদালতে পাল্টা জানিয়েছেন, ২০২১ সালে তার গর্ভপাত হয়। তার কিছু দিনের মধ্যে তার ভাইয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে। এই সমস্ত ব্যক্তিগত সমস্যার প্রভাব তার কাজের উপর পড়েছিল বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী। তাদের আবেদন বিবেচনা করছে শীর্ষ আদালত।