ঘন কুয়াশার চাদরে ঠাকুরগাঁও বাড়ছে শীতজনিত দুর্ভোগ
জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ক্রমেই বাড়ছে শীতজনিত দুর্ভোগ। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে চারপাশ। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন দরিদ্র-শ্রমজীবী মানুষ, তবে জেলা প্রশাসন বলছে- শীত মোকাবিলায় তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমান বন্দরের রানওয়েতে কোনো বিমান অবতরণ করতে পারেনি। বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক এ কেএম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তবে আপাতত ফ্লাইট বাতিলের কোনো সম্ভাবনা নেই।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাপ পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দুই দিন ধরে বেলা ৯টা থেকে ১০টার
আগে সূর্যের দেখা মেলে না। এবার জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি হতে পারে।
তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা-ঘাট একেবারে ফাঁকা, মানুষজন নেই। কুয়াশার কারণে বিভিন্ন সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। শীতের তীব্রতার জন্য নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারছেন না। শ্রম বিক্রি করতে না পারায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
শহরের হাজীপাড়া এলাকার সামসুল আলম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে; সারাদিনই কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারপাশ। ঠান্ডার কারণে আমি জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছি।’
কালিতলা এলাকার রিকশাচালক বসির উদ্দীন বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে এখন মানুষজন রিকশায় উঠতে চায় না। এ কারণে আমাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
ট্রাক চালক আজিম উদ্দীন আজাদ বলেন, ‘অন্য বছরের মতো এবারও ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে ঠাকুরগাঁওয়ের জনপদ। তাই দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের কারণে গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে।
শহরের হঠাৎপাড়ার শামীমা আক্তার, ডিসি বস্তির নজরুল ইসলাম, মুন্সিপাড়ার আমির হোসেন, হাজীপাড়া এলাকার শফিকুল জানান, কুয়াশার কারণে সকালে কিছুই দেখা যায় না। সূর্য ওঠে অনেক দেরিতে। এছাড়া সন্ধ্যার পরপরই প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভূত হয়। এতে টেকাই বড় মুশকিল হয়ে পড়েছে তাদের। এখন পর্যন্ত কেউ তাদের শীতবস্ত্র দেয়নি। শীতের কারণে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিনই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলার মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সাজ্জাদ হায়দার শাহীন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন শীতজনিত শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শিশু-বৃদ্ধ রোগীদের চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই শিশু।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় একটি আবহাওয়া অফিস দরকার, তাহলে আরও নির্ভুলভাবে তাপমাত্রা রেকর্ড করা যেত। কৃষিপ্রধান ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকদের আগাম সতর্কবার্তা প্রদান করা যেত।’
অন্যদিকে, শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে আগাম শীত হওয়ার কারণে অগ্রিম ৮০ হাজার শীতবস্ত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে শীতবস্ত্র পাবো বলে আশা করি। এছাড়া এরই মধ্যে বেসরকারিভাবে এক হাজার শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে, সেগুলো ভাসমান অতিদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।’
বিমান ওঠানামা ব্যাহত : ঘন কুয়াশায় নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত রানওয়েতে কোনো বিমান ওঠানামা করেনি বলে জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক একেএম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
তিনি বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ৮টায় বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ারের ও এয়ার অ্যাস্টার দুটি ফ্লাইট সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের কথা থাকলেও বিমান দুটি নামতে পারেনি। রানওয়েতে উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য কমপক্ষে দুই হাজার মিটার ভিজিবিলিটি (দৃষ্টিসীমা) থাকতে হয়। বর্তমানে ১২০০ মিটার দৃষ্টিসীমা বিরাজ করছে। আকাশ পরিষ্কার হলে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। শীতের এ সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় এমনটি ঘটে। তবে কোনো ফ্লাইট বাতিলের সম্ভাবনা নেই।
বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তরের জেলা নীলফামারীতে ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রার পারদ কমছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দৃষ্টিসীমা ছিল ২০০ মিটার।