রসিদ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন ফি’র নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ

সাইফুল ইসলাম : শুধু উচ্ছৃঙ্খলতাই নয়, দুর্নীতিও প্রবল গতিতে সংক্রমিক হচ্ছে দেশের সর্বস্তরে। প্রবল বন্যার মত দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। অফিস-আদালতে ঘুষ-দুর্নীতি,প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য আজ চরম দুর্নীতির পরিচয় রাখছে। ফলে সত্য ও সুন্দরের প্রত্যাশা সমাজ থেকে নির্বাসিত হচ্ছে। ঠিক তেমনি করে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়াশাল ইউনিয়নের ঘোড়শাল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ওয়াজেদ আলী জর্দ্দারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের থেকে রেজিস্ট্রেশনের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মাদ্রাসায় ঢুকতে মাদ্রাসার নামে সাইনবোর্ড না থাকলেও মাদ্রাসা ঘেঁষে রাস্তার সাইডে বিশাল বড় করে সিদ্দিকীয়া হামিদিয়া দরবার শরীফ নামে একটা সাইনবোর্ড দেওয়া আছে। সেই দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা নাকি অত্র মাদ্রাসার সুপার ওয়াজেদ আলী জর্দ্দারের পিতা শুফি হেলাল উদ্দিন জর্দ্দার।

একদিকে মাদ্রাসার জমি ঘেঁষে তার বাড়ি সাথে প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা,প্রতিষ্ঠাতা এবং দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা তার হওয়ায়। মাদ্রাসার সুপার ওয়াজেদ আলী জর্দ্দারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার কোন শিক্ষক ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা। তার ব্যক্তিগত কাজ সহ মাদ্রাসার অন্যান্য কাজে তিনি বাইরে গেলেও মাদ্রাসা থেকে তার কোন ছুটি নেওয়া লাগেনা। এমনকি হাজিরা খাতায় সই পর্যন্ত করতে হয় না তার।

৬ষ্ঠ এবং ৮ম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি’র নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে এমন সংবাদ পেয়ে সাংবাদিকরা মাদ্রাসায় গেলে দেখা মেলে মাদ্রাসার সুপার মাদ্রাসায় নেই। সহকারী সুপার মিজানুর রহমান বলেন বেতন সংক্রান্ত বিষয়ে ইউএনও স্যার ডেকেছেন তাই হাজিরা খাতায় সই না করে তিনি ঝিনাইদহ গেছেন। ৬ষ্ঠ এবং ৮ম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি কতো করে নিচ্ছেন এ মর্মে জানতে চাইলে সুপারের ভয়ে কোন শিক্ষক মুখ খুলতে নারাজ এবং তারা বলতে থাকেন এ বিষয়টি সুপার নির্ধারণ করেছেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

একপর্যায়ে পাশে থাকা অফিস সহকারী নুর ইসলাম বলে ওঠেন সত্য কথা বলতে ভয় কিসের। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর সহকারী শিক্ষক ইয়াহিয়া বলেন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ ৩ শত টাকা এবং পাশে থাকা ৮ম শ্রেণির শিক্ষক শাহাজান বলেন ৮ম শ্রেণিতে নেওয়া হচ্ছে ৫৬০ টাকা মাত্র।

যদিওবা সরকারী বিধি অনুযায়ী ৬ষ্ঠ শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন ফি ৫৪ টাকা আর
৮ম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭৪ টাকা। কিন্তু ঘোড়শাল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ওয়াজেদ আলী জর্দ্দার সরকারী এ বিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ শত এবং ৮ম শ্রেণীর ৩১ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫ শত ৬০ টাকা করে আদায় করেন।

৬ষ্ঠ এবং ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফির কথা বলে মোট ২৭ হাজার ৩ শত ৬৬ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন ওই ঘোড়শাল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ওয়াজেদ আলী জর্দ্দার। এ সমস্ত টাকার কোন খাতা-পত্র নেই মর্মেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে ঘোড়শাল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ওয়াজেদ আলী জর্দ্দারের কাছে জানতে চাইলে তিনি অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসার অন্যান্য খরচের ব্যয় মিটাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সরকারী ফি এর পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু টাকা গ্রহণ করা হয়। রসিদের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন টাকার কোন রসিদ দেওয়া হয়নি। আমি ঝিনাইদহে আছি আগামীকাল আপনারা প্রতিষ্ঠানে আসেন। একসাথে বসে চা খাব।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া আক্তার চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার কোন সুযোগ নেই। যদি ঘোড়শাল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার নিয়মবহির্ভূত কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *