১২ বছরেও শেষ হয়নি বনফুল টাওয়ারের নির্মাণ কাজ, বিপাকে ২৪ ফ্লাট মালিক

টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি রাহিদ রানা : ১২ বছরেও বনফুল টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চরম বিপাকে পরেছেন ২৪জন ফ্লাট মালিক ও পরিবারের সদস্যরা। দফায় দফায় ডেভেলপারসকে তাগাদা দিয়েও কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় সমস্যা নিয়েই ফ্লাটে বসবাস শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এরপরও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা গুলোর সমাধান না দিয়ে ইতালী পাড়ি জমিয়েছেন ওই বহুতল ভবনের ডেভেলপারস। এতে চরম হতাশা আর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন ফ্লাট মালিকরা।
নকশা বর্হিভুত নির্মাণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পাওয়ার স্টেশন স্থাপন, দক্ষিণের নিরাপত্তা দেয়াল, পানি ও গ্যাস সংযোগ, এন্টি থান্ডারিং ও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না দেয়ার মত গুরুতর চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ফ্লাট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল পৌর শহরের সাবালিয়ার ওয়ার্ল্ড ডেভেলপারস লিঃ স্বত্বাধিকারী ও বনফুল টাওয়ারের ডেভেটপারস কাইয়ুম কবিরের বিরুদ্ধে।
গুরুতর এত অভিযোগ স্বত্ত্বেও কোন পদক্ষেপ নেননি পৌরসভা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে চুক্তির শর্ত পূরণের দাবি ও প্রতিবাদ জানানোর ক্ষোভে ভবন পরিচালনায় গঠিত ফ্লাট মালিকদের সংগঠণ সুশীল নাগরিক এসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষের মানহানিকর তথ্য ও বহিরাগতদের সম্পৃক্ত করে মিছিল, মানববন্ধন পালন করাসহ প্রচার প্রচারণার মত নগ্ন ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত এখন ল্যান্ডলর্ডের প্রবাসী এক ছেলে আর ডেভেলপারস। এছাড়াও সংগঠণের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সদর পুলিশ ফাঁড়িতে ল্যান্ডলর্ডের প্রবাসী স্ত্রী ফ্লাট কমে দামে কেনার চাপ প্রয়োগসহ দুইটি ফ্লাটের একজন মালিককে ফ্লাটে ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
দাবি আর প্রতিবাদ থেকে দূরে রাখতে সুশীল নাগরিক এসোসিয়েশনের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ ফাঁড়িসহ প্রচার প্রচারণায় মিথ্যা অভিযোগ গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বনফুল টাওয়ারের সাধারণ ফ্লাট মালিকরা। এছাড়াও ল্যান্ডলর্ড আর ডেভেলপারসের যোগসাজসে সাবালিয়া এলাকার বাসিন্দা ও ভবনের দুইটি ফ্লাটের মালিক মিঠু রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংগঠণের সভাপতির ফ্লাটে বহিরাগতদের নিয়ে ভয় দেখানোসহ সাধারণ সম্পাদক উজ্জলের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন, চাঁদা না দিলে দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
অল্প দামে ক্রয়কৃত সমস্যায় জর্জরিত ফ্লাট বিক্রি করে আমরা অন্যত্র চলে যাই সেই ষড়যন্ত্রে মেতেছেন ল্যান্ডলর্ডের প্রবাসী ছেলে মাহবুব উল্লাহ মুন্না আর ডেভেলপারস কাইয়ুম কবির ছোটন বলেও জানান তারা।
নির্যাতন লাঘবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, বিদ্যুৎ বিভাগ আর ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন ফ্লাট নীরিহ মালিকরা।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ মার্চ টাঙ্গাইল পৌরসভা ১৯ নং ওয়ার্ডের সাবালিয়া মৌজার ১১১ এ.বি.আর নং দাগের ভূমির উপর ৩৫৩৩ বর্গফুট বিশিষ্ট বেসমেনসহ ১০ তলা আবাসিক ইমারত, ল্যাট্রিন, বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণের দাখিতকৃত প্লান অনুমোদনপত্র জারীর পাঁচ বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করাসহ প্লান বাতিলের বেশ কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়।
তবে সরেজমিন আর অভিযোগে জানা গেছে, নির্মাণের ১২ বছরেও বনফুল টাওয়ারের দক্ষিণ অংশে নির্মিত হয়নি নিরাপত্তা দেয়াল। এতে চুরি, ডাকাতির মত চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন ফ্লাটে বসবাসরতরা। নকশা বর্হিভুত সিড়ি, বয়েট ও গেইট নির্মাণসহ ভবনের ছাঁদে সোলার ব্যবস্থা চালু না করে নিয়ম বর্হিভুতভাবে পাওয়ার স্টেশন স্থাপন, নেই গ্যাস ও পানির সংযোগ, বর্জপাতরোধে এন্টি থান্ডারিং স্থাপন না করাসহ রাখা হয়নি জরুরী সেবার অগ্নি নির্বাপক, এ্যাডজাস্ট ফ্যান ও ইন্টার কম সুবিধা। এছাড়াও নেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক মিটার প্রতি সাড়ে হাজার টাকা।
৬ সি’র ভুক্তভোগী ফ্লাট মালিক গৃহিনী শাহানা বলেন, উজ্জল চক্রবর্তীকে আমরা ফ্লাট মালিকরা ভোট দিয়ে সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছি। তিনি জোর করে কমিটির নেতৃত্বে আসেননি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী আর মাদক ব্যবসার অভিযোগ গুলো ষড়যন্ত্রমূলক। কেননা উজ্জল তার মা, বউ আর মেয়ে নিয়ে ওই ফ্লাটেই বসবাস করেন।
ল্যান্ডলর্ড মরহুম রহমত উল্লাহ্র বিদেশী স্ত্রীর বসবাসরত ৩ এর এ/বি ফ্লাটটি উজ্জল চক্রবর্তী জোর করে কেনার চেষ্টা করছেন এমন কোন অভিযোগ আপনী পেয়েছেন কিনা প্রশ্নে ৩’র সি প্রবাসী মুন্নার ফ্লাটের ভাড়াটিয়া গৃহিনী বলেন, এমন কোন বিষয় আমি শুনিনি। তবে এরআগে আমি বাড়িতে থাকতে আমার ফ্লাটে বিদ্যুতের সমস্যা হয়েছিল, সেটি সমাধান করে আমার বড় উপকার করেছিলেন টাওয়ার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চক্রবর্তী।
বনফুল টাওয়ারের ফ্লাট মালিক ও অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এস.এম আবু তাহের বলেন, এ ভবনের উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করার কারণে আমরা ২২ জন ফ্লাট মালিক ভোট দিয়ে উজ্জল চক্রবর্তীকে এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছি। ভবিষ্যতে নির্বাচন হলে ফ্লাট মালিকরা আবারও তাকে নির্বাচিত করবে বলে আমি আশা প্রকাশ করি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে উঠা মাদক ও নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক।
টাওয়ার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চক্রবর্তী বলেন, আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় বনফুট টাওয়ারের ল্যান্ডলর্ড এর ছেলে কানাডা প্রবাসী মুন্না আর ডেভেলপারস ছোটন ভবনের নেতৃত্ব থেকে আমাকে সড়াতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তারা ল্যান্ডলর্ড এর দ্বিতীয় স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান বৃদ্ধাকে দিয়ে উনার বসবাসরত ফ্লাট কম দামে কেনার জন্য চাপ প্রয়োগের মিথ্যা অভিযোগ পুলিশ ফাঁড়িতে দিয়েছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় বেশ কয়েক স্থানীয় যুবক নিয়ে আমার কাছে বিশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা এই টাওয়ারের দুটি ফ্লাটের মালিক মিঠু তাদের সহযোগি হিসেবে কাজ করছেন। চাঁদার টাকা না দিলে আমাকে দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন মিঠু।
তিনি বলেন, অর্থের যোগান ও প্ররোচনা দিয়ে উনারা এখন আমার মানহানীকর তথ্য পরিবেশন আর বহিরাগতদের সম্পৃক্ত করে মিছিল, মানববন্ধনের নাটক সাজিয়ে মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। ওই প্রচার প্রচারনায় বনফুল টাওয়ারের ফ্লাট মালিক মিঠু ব্যতিত কেউ নেই। সকলে আমার পক্ষে থাকতেও তারা কমিটি বাতিলের চেষ্টা করছেন। ফ্লাট মালিকদের প্রাপ্য বঞ্চিত করতে এ অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উজ্জল চক্রবর্তীর কাছে বিশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও তাকে দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন আকবর হোসেন মিঠু।
চুক্তি অনুযায়ি সকল কাজই করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডেভেলপারস এর প্রতিনিধি জাহিদ।
ল্যান্ডলর্ডের প্রবাসী ছেলে মাহবুব উল্লাহ মুন্না আর ডেভেলপারস কাইয়ুম কবির ছোটন প্রবাসে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য গ্রহণ করা যায়নি।
টাঙ্গাইল সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ রুহুল আমিন বলেন, বনফুল টাওয়ারের ল্যান্ডলর্ড মরহুম রহমত উল্লাহ্র বিদেশী স্ত্রী উজ্জল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কম দামে ফ্লাট কেনার জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার নগরপরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ৫বছর মেয়াদ চুক্তিতে অনুমোদনপ্রাপ্ত বনফুল টাওয়ার নির্মাণ কাজ ১২ বছরে শেষ হয়নি, এ অভিযোগ আপনাদের মাধ্যমে আমি জানতে পারলাম। ফ্লাট মালিকরা লিখিত অভিযোগ দিলে জরিমানাসহ অনুমোদন বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারি পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভুঞা জানান, সেফটি প্লান ব্যতিত করা সম্ভব নয়। অঅমি সরেজমিন ওই ভবন পরিদর্শক করবেন। এরপরও লিখিত অভিযোগ পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *