ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিন মুক্ত গণমাধ্যম চাই
ডেস্ক রিপোর্ট : সরকারের যৌক্তিক সময় নিয়ে আলোচনা, সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠনের সুপারিশ, সাংবাদিকদের যত্রতত্র হত্যা মামলার আসামি করা যাবে না, বাতিল করতে হবে সাংবাদিক বিরোধী কালো আইন
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যে যৌক্তিক সময়ের কথা বলা হচ্ছে তা কত বছর-এ বিষয়ে গণমাধ্যম সম্পাদকদের মতামত জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জবাবে সম্পাদকরা কেউ বলেন দুই বছর, কেউ বা তিন বছর মেয়াদের কথা উল্লেখ করেন। তাঁদের অনেকেই আবার বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হওয়া উচিত। গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের গণমাধ্যমের সম্পাদকদের বৈঠকে এ প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এ ছাড়া সম্পাদকরা সরকারের সংস্কার কার্যক্রম, গণমাধ্যম সম্পর্কিত কালো আইন বাতিল, যত্রতত্র খুনের মামলায় সাংবাদিকদের না জড়ানো, নির্বাচন কমিশন, দুদক, মানবাধিকার কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করা, ঢাকা থেকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, গণমাধ্যম কমিশন গঠন, বিটিভি, বেতার ও বাসসের মতো সরকারি গণমাধ্যমের স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাবসহ রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন সুপারিশ ও মতামত তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পাদকদের মতামত শোনার পর দেশের জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সহায়তা চান। তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, তাঁর সরকার মিডিয়ার পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। উপরন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ভুলত্রুটি গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্যও উপস্থিত সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে অংশ নেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ, আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন, করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাকিদের সঙ্গে কথা বলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। পরে একই বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হিসেবে উঠে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের বিষয়টি। ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্পাদকদের মতামত তুলে ধরে জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের বিষয়ে বিভিন্ন রকম কথা এসেছে। সর্বনিম্ন দুই বছর। কেউ কেউ আবার দুই থেকে তিন বছরের কথা বলেছেন। প্রেস সচিব বলেন, গত শনিবার রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার যেন ‘যৌক্তিক সময়’ পর্যন্ত থাকে। মূল কথা হচ্ছে, যৌক্তিক সময় কত? সেটাই প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি সম্পাদকদের কাছে জানতে চান। এটা কি এক বছর, না ছয় মাস, না দুই বছর, না কি তিন বছর হবে-সে প্রশ্ন আসে। এ বিষয়ে একজন প্রভাবশালী সম্পাদক বলেছেন, এটা দুই থেকে তিন বছর হতে পারে। আরও একজন দুই বছরের কথা বলেছেন। অনেকে আবার বলেছেন, যে ধরনের সংস্কার করতে হবে তা নিয়ে আগেই সময় নির্ধারণ করে দেওয়া ঠিক হবে না। সম্পাদকদের সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কে প্রেস সচিব জানান, অনেক কথা এসেছে, সংবিধান সংশোধন, সংবিধান নতুন করে লেখা, আইন কমিশন, সংবিধান কমিশন, মিডিয়া কমিশন, পুলিশের জন্য কমিশন, পুলিশকে কীভাবে আরও কার্যকর কাজে লাগানো যায়, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা এসেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এসেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, মিডিয়ায় যেসব কালাকানুন আছে সেগুলো যাতে বাদ দেওয়া হয় বা সংশোধন করা হয় সে প্রস্তাব দিয়েছেন সম্পাদকরা। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন, তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন এবং ‘ভাইব্রেন্ট মিডিয়া’ দেখতে চান। মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ব্রিফিংয়ে বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যাতে কোনো সাংবাদিক কোনো অসুবিধায় না পড়েন, সে বিষয়ে একটা মিডিয়া কমিশন গঠন করার প্রস্তাব এসেছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন আছে। এর আগে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা মতবিনিময় শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, আমরা প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করেছি। আমরা চাই নতুন দিগন্ত বাংলাদেশে উন্মোচিত হোক। সাংবাদিকদের ঢালাওভাবে হত্যা মামলার আসামি করার বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে বলেও জানান মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, সেখানে সম্পাদক হিসেবে আমি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছি। আমি বলেছি যে, সাংবাদিকদের নামে যেভাবে যত্রতত্র খুনের মামলা হচ্ছে, এটা যেন বন্ধ হয় এবং এ ব্যাপারে সরকার যেন একটা সুষ্পষ্ট অবস্থান নেন। সাংবাদিকদের যদি কোনো রকম দোষ থাকে, কারোর বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকে-এ বিষয়ে আলাদা মামলা হতে পারে। কিন্তু এইভাবে যেন না হয়। এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আনাম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সাংবাদিকদের হত্যা মামলায় আসামি করার বিষয়টি তার সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নয়। ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আশা করছি। সেই সংস্কারের মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা যেমন- দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন- এগুলোকে সংস্কার করার বিষয়ে বলেছি। এ প্রসঙ্গে মাহফুজ আনাম আরও বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা জরুরি। সত্যিকার অর্থে গণমুখী সংস্থা আমরা চাই। নির্বাচন কমিশন যাতে ভবিষ্যতে ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটায়, এরকম একটা সংস্থা চাই। আমরা এমন দুর্নীতি দমন কমিশন চাই, যেন তারা স্বাধীনভাবে দেশের দুর্নীতি দমন করতে পারে। বিটিভি, বিএসএস এবং বাংলাদেশ বেতারের মতো যেসব সংবাদমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। মাহফুজ আনাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে, এটা আমাদের কাছে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) জিজ্ঞাসা করেছেন। এটা নিয়ে অনেকেই মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন সময়। কিন্তু মূল কথা যেটা আসছে, সেটা হলো এই সরকারের এজেন্ডা কী? সেই অনুপাতে সময় (নির্ধারণ করা)। অনেক রাজনৈতিক দল বলেছে, আপনাদের যতদিন লাগে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলেছে, যৌক্তিক সময়, এগুলো তো অস্পষ্ট। উনার ইচ্ছা যে, আমরা খবরের কাগজ-টেলিভিশনের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে উনাকে একটি ধারণা দিই যে, জাতি কী চায়। (মেয়াদ) কত বছর হতে পারে দুই-তিন-পাঁচ বছর-এটা নিয়ে উনার নিজস্ব কোনো চিন্তা নেই, উনি চান জনতার চিন্তা জানতে। সে ব্যাপারে উনি মিডিয়াকে আহ্বান করেছেন, আমরা যেন জনগণের কথা লিখি এবং উনাকে জানাই যে (মেয়াদ) কত দিন। ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা’ বিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি করা হয়েছে জানিয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনের মধ্যে সাংবাদিক নিপীড়নের যে অধ্যায়গুলো আছে, সেগুলো কার্যকর হবে না- এমনটা যাতে ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা সংস্কারের জন্য সরকার সময় নিয়ে করতে পারেন। সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরাও সংবিধান সংস্কার চাই। আমরা গণতান্ত্রিক রিফর্ম চাই। প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন যে, একটা গ্রুপ করে বা একটা বিশেষ কমিটি করে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আইনের যে পরিবর্তন আছে, স্বাধীন বিচার বিভাগ, পুলিশ বাহিনী সংস্কার- ওই কমিটি বা গ্রুপের মাধ্যমে এসব সংস্কার করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সূত্র ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, তিনি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন। আমাদেরকে বিশেষ আবেদন করেছেন, আমরা যেন আমাদের লেখনীর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করি। এ সরকারের ভুল-ত্রুটি সোচ্চারভাবে, নির্দ্বিধায় সেটা যেন কাগজে ছাপাই। এই সরকারকে যেন সাহায্য করি। এ প্রসঙ্গে মাহফুজ আনাম আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সত্যিকার অর্থে মিডিয়ার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। মিডিয়াবান্ধব যদি কোনো সরকারপ্রধান আমরা পেয়ে থাকি, তাহলে আমরা এখন পেয়েছি। আমরা এর জন্য অত্যন্ত আনন্দিত।
সরকারের মেয়াদ নিয়ে সম্পাদক পরিষদের প্রেস বিজ্ঞপ্তি : এতে বলা হয়, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভা প্রসঙ্গে পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘সবাই বলেছেন যে মিনিমাম দুই বছর বা দুই বছরের একটু কম যাতে এ গভর্নমেন্টের মেয়াদ হয়। বাট বেশির ভাগই যৌক্তিক সময় নিয়েও বলতে চাননি। তারা বলেছেন, যে এজেন্ডা বা যে কাজটা তারা করবেন সেই কাজটাই আসলে ডিটারমাইন করবে তারা কতদিন থাকবেন।’ ‘এ বিষয়টি সম্পাদক পরিষদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ সম্পর্কে সংগঠনটির বক্তব্য হলো আজকের সভায় উপস্থিত সম্পাদকদের বেশির ভাগই সম্পাদক পরিষদের সদস্য। উপস্থিত সম্পাদকদের মধ্যে কেউ কেউ প্রধান উপদেষ্টা জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে সরকারের মেয়াদ নিয়ে কথা বলেছেন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ সম্পাদকই সরকারের মেয়াদ নিয়ে কিছু বলেননি। তারা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, জনমানুষ ও কারখানার নিরাপত্তা এবং এ সরকারের এজেন্ডা বা রূপরেখাকে দ্রুত জনগণের সামনে উপস্থাপনের বিষয়ে বেশি তাগাদা দিয়েছেন।’ সম্পাদক পরিষদের পক্ষে, সংগঠনের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ এ প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যা : ‘মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে একাধিক সম্পাদক পরামর্শ দেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রায় দুই থেকে তিন বছর হতে পারে। তবে বেশির ভাগ সম্পাদক বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারের জন্য যে সময় প্রয়োজন, সে পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ করা উচিত।’