(বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার গ্যাসের আঘাতে দৃষ্টি গেছে নাইমুলের ; উন্নত চিকিৎসা পেলে ফিরে পেতে পারে দৃষ্টিশক্তি

আদমদীঘি প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার গ্যাসের শেলের আঘাতে চোখের দৃষ্টি শক্তি হারাতে বসেছেন কলেজ ছাত্র নাইমুল হক। এরই মধ্যে বগুড়া ও ঢাকায় অন্তত ৩ বার অপারেশন করার পরেও তিনি ডান চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পারছেন না। চিকিৎসকরা নাইমুলকে আবারও অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন কিন্তু তাতে চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরবে কিনা সে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।
নাইমুল হক বগুড়ার আদমদীঘি রহিম উদ্দিন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া বেলঘড়িয়া এলাকার মনোয়ার হোসেনের ছেলে। আহতের পর থেকে এখন পর্যন্ত তার পাশে এসে দাঁড়ায় নাই কেউ। প্রায় এক মাস ধরে অসুস্থ থাকলেও শুুধুু স্থানীয় তালোড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল জলিল ছাড়া আর কেউ তার খোঁজ খবর নেননি কিংবা দেখতেও আসেননি।
এ ব্যাপারে নাইমুল হক জানান, গত (১৮ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে তিনি বগুড়া শহরে গিয়েছিলেন। ওই দিন তারা শহরের দত্তবাড়ি এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। দুপুর ১টার দিকে তারা শহরের জিরো পয়েন্টের দিকে এগোতে চাইলে সদর থানার সামনে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। তখন একটি টিয়ার শেল তার ডান চোখে আঘাত করে। পরে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিন তার চোখে প্রথম অপারেশন হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ২৭ জুলাই ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে যান। সেখানে দ্বিতীয় বার অপারেশন হয়। পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট তিনি আবারও ইসলামিয়া হাসপাতালে যান এবং আরেক বার তার চোখে অপারেশন করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার আরও একবার অপারেশন প্রয়োজন। তবে অপারেশন করলেই যে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না বলে জানান নাইমুল হক।
নাইমুল হকের বাবা মনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ছেলে দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। তিনি তার চিকিৎসার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত নেতৃবৃন্দসহ সরকারি সহায়তা কামনা করেন।
তালোড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল জলিল বলেন, নাইমুল হক আমার এলাকার সন্তান। সে ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার গ্যাসের আঘাতে পায় তার ডান চোখে। এই খবর পাওয়ার পর থেকেই আমি সার্বক্ষাণিক তার খোঁজ নিতে থাকি এবং চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করছি। তবে আমার একার পক্ষে সহায়তা করা সম্ভব নয়। তার গরিব বাবার পক্ষে তার চিকিৎসার ব্যায় ভার মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে যাতে নাইমুল আবার তার চোখের আলো ফির পায়।
এ বিষয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদের কাছে চোখে আঘাত প্রাপ্ত নাইমুল হকের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার চোখের অবস্থা খুবই গুরুতর। তিনি আদৌ দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *