শেরপুরের নকলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় শিক্ষক বরখাস্ত
জাহাঙ্গীর হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নকলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারী শিক্ষার্থী ও তাদের মা, দাদী ও নানীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
ওই শিক্ষকের নাম কাজী আকিলুজ্জামান আপেল। তিনি বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের বানেশ্বর্দী গ্রামের কাজীবাড়ীর সামছুজ্জামানের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নকলা পৌরশহরের নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
অভিযোগে জানা যায় গত ১৫ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ক্লাসে পাঠদান করছিলেন শিক্ষক আপেল। ওইসময় তিনি ক্লাসে উপস্থিত কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগহণ করা এক নারী শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে যে সব নারী শিক্ষার্থী অংশগহণ করেছে তারা চরিত্রহীনা। তাঁদেন মা বেশ্যা, দাদী বেশ্যা, নানী বেশ্যা।’ শিক্ষকের এমন মন্তব্যে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দেলনে অংশ নেওয়া উপজেলা শাখার নেতাকর্মীরা।
পরবর্তীতে ১৮ আগষ্ট রবিবার ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক আপেলের বহিস্কারের দাবীতে বিদ্যালয় মাঠে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব তাঁর অফিসকক্ষে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক, নারী শিক্ষার্থীর বাবা ও কোটা সংস্কার আন্দোলন নকলা উপজেলা শাখার কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিযে জরুরি সভায় বসেন। খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন একজন সেনাকর্মকর্তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য। হাজির করা হয় শিক্ষক আপেলকে। সভায় আপেল তাঁর কৃতকর্মের জন্য দু:খ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমনকিছু করবেননা বলে উপস্থিত সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু নারীশিক্ষার্থীর বাবা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা শিক্ষক আপেলকে বহিস্কারের দাবীতে অনড় থাকেন। পরে ১৯ আগষ্ট সোমবার বিদ্যালয় অফিসকক্ষে সকলের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়ে সভার মুলতবী ঘোষণা করেন।
কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে না গিয়ে শিক্ষক আপেলকে বহিস্কারের একদফা দাবীতে বিদ্যালয় মাঠ থেকে পৌরশহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব শিক্ষক আপেলকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেন।
নারী শিক্ষার্থীর বাবা জানানা শিক্ষক আপেল অশালীন আচরণ করে আমার মেয়েকে যেভাবে হেনস্তা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আমি শিক্ষক আপেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নকলা উপজেলা শাখার একজন নেতা নকলা সরকারি হাজী জালমামুদ কলেজের শিক্ষার্থী রাইয়্যান আল মাহাদী জানান একজন নারী শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষক আপেলের এমন আচরণ আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনা। আমরা তাঁর স্থায়ী বহিস্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক চাই।
নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব জানান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক কাজী আকিলুজ্জামান আপেলকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পর্বর্তীতে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।