কেউ চাঁদাবাজি করলে পা ভেঙে দিতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ডেস্ক রিপোর্ট : চাটুকারী করলে মিডিয়া বন্ধ, ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্ট হবে, সংখ্যালঘুদের গায়ে যেন হাত না পড়ে, পুলিশ কাজে না ফিরলে পলাতক ঘোষণা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আমি কোনো রাজনীতিবিদ নই যে, সকালে এক কথা বলব আর বিকালে আরেক কথা বলব। আমি সেনাপ্রধানকে বলেছি, যারা দখলদারিত্ব বা চাঁদাবাজি করবে তাদের পা ভেঙে দিতে। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ দেশে রাজনীতি করতে হলে পলিটিক্যাল অ্যাক্ট অনুযায়ী করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত আছি আমি এটা করে ছাড়ব, এটা আপনাদের পছন্দ হলেও না হলেও। আপনারা যদি পলিটিক্যাল অ্যাক্টের মধ্যে থাকেন তাহলে কার্যক্রম চালাতে পারবেন, আর না থাকলে পারবেন না। আপনারা স্বৈরাচারী জায়গায় চলে যাবেন সেটি হবে না। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলতে চাই- আওয়ামী লীগের অবস্থা আজকে দেখুন। এত বড় একটি ঐতিহ্যবাহী দল, যার নামের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা জড়িত, আজ সেই দলের সদস্যদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তাদের জায়গায় যদি আপনি মনে করেন বাজার দখল করব, এটা দখল করব, ওটা দখল করব, চাঁদাবাজি করব তাহলে কিছুদিন করেন। আমি সেনাপ্রধানকে বলেছি- এমন করলে তাদের পা ভেঙে দিতে। আই ডোন্ট কেয়ার ইউ গো টু হেল। আমার কানে এসব এলে ভালো হবে না। আমি পাবলিকও না, রাজনীতিবিদও না। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে ফৌজি মানুষ। যা বলব তাই করব। এর আগে দুপুরে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একটা তারিখ ঘোষণা করব। ওই তারিখের মধ্যে যদি কোনো পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে না আসেন, আমরা ধরে নেব তারা পলাতক।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাথার চামড়া খুলে ফেলা, হাত-পা-মাথা থেঁতলিয়ে ফেলা, এটা সহ্য করার মতো না। হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে, এটাও দুঃখজনক। পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লুট হওয়ার খবর পাচ্ছি। আমাদের সেনাবাহিনী ও বিজিবি মাঠে আছে। কিন্তু এটা তাদের কাজ না। পুলিশের যেটা কাজ, সেটা তারা পারে না।
তিনি বলেন, একটা রাষ্ট্র এভাবে চলে না, একজনের ইচ্ছামতো রাষ্ট্র চালানো যায় না। দেশটা কারও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পত্তি নয়। হাজার হাজার লোক মারার পরও ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার মানসিকতা থেকে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো। তাদের হাতে গত ১৫-২০ বছর আগে মারণাস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্ট হবে। পুলিশকে আর লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। পুলিশ কমিশনের মতো পুলিশ চলবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় ডাকাতি হচ্ছে। কী করবেন পুলিশ নাই, পুলিশ সদস্যরা ডিমোরালাইজড হয়ে গেছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, পুলিশকে ব্যবহার করেছে কে? তাদের ধরেন। আমি চেষ্টা করব। হুকুমদাতা যারা ছিল তাদের শাস্তি হবে, কঠোর শাস্তি হবে। দেশে না পারলে বিদেশে হবে। এটা কোনো কথা হলো না, হুকুম দিয়ে ছেলে-পেলে আর জনগণকে মারবেন, এটা হতে পারে না। আবার আসেন, দেখেন জনগণ কী করে। জনগণ ছিঁড়ে ফেলবে এবার। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কারা পুলিশকে এভাবে ব্যবহার করেছে।
পুলিশ সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওনাদের কয়েকজন প্রতিনিধি আসবে, তাদের শতভাগ কথা শুনব। তারা এমন কোনো দাবি করেননি, যেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। কিছু জায়গায় হয়তো দেরি হবে। আপনারা থানায় ফিরে যান। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি হয়ে গেছে চাটুকারদের রাজনীতি। আমরা কোনো রাজনীতিবিদ তৈরি করিনি, চাটুকার তৈরি করেছি। মানুষ মরে যাচ্ছে কিন্তু বলা হচ্ছে, সব ঠিক আছে। এরকম চাটুকারদের দল দিয়ে রাজনীতি করা যায় না। এখন যেসব রাজনৈতিক দল আছে তাদের বলছি, আপনারা চাটুকারদের বাদ দিন। এখন আর চাটুকারদের দেখা যাচ্ছে না। পালিয়ে গেছে। কারণ, তারা গণমানুষের রাজনীতি না করে চাটুকারিতা করেছে। সরকারকে সঠিক পরামর্শ দেয়নি। তিনি বলেন, দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একজন পিয়ন ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। যাকেই ধরেন ৪ হাজার-৫ হাজার কোটি টাকার নিচে রাজনীতিবিদ খুঁজে পাওয়া যায় না। বিদেশে ১০-১২টা করে বাড়ি। আমার কী কী আছে সেসব সম্পদের খতিয়ান আমি অতি দ্রুত জমা দেব। গণমাধ্যম সম্পর্কে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে কোনো মিডিয়া চাটুকারিতা করলে বন্ধ হয়ে যাবে। চাটুকারী মিডিয়া হবেন, বন্ধ করে দেব। অতীতে যাই ছিল, আমি কোনোটা বন্ধ করতে চাই না। আমি এক কথার মানুষ, চাটুকারিতা করবেন, বন্ধ করে দেব। আপনারা এত দিন সত্যি ঘটনা তুলে ধরেননি। যদি ধরতেন তাহলে পুলিশের এ অবস্থা হয় না। বারবার বলেছেন ‘কিছু হয়নি’। শেম অন ইউ। শেম অন দ্য মিডিয়া ওনার।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, টেলিভিশনের টকশোতে কাকে ডাকা যাবে, কাকে ডাকা যাবে না লিস্ট করেন। সেখানে জ্ঞানগর্ভ কোনো আলোচনা হয় না। অনুগ্রহ করে চাটুকারদের ডাকবেন না। এরা মেধাশূন্য হয়ে গেছে। দয়া করে সঠিক তথ্য তুলে ধরেন, যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের চোখটা যেন খোলে। একটা দেশ ডুবে যখন মিডিয়া সত্য কথা না বলে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। সবার বিচার হওয়া উচিত, মিডিয়া ওনারদেরও। নির্বাচনে চুরি হচ্ছে, বলে কোনো সমস্যা নেই। ভোট খুব ভালো হয়েছে। দয়া করে দেশটাকে বাঁচান। যেটা হয়েছে সেটার তদন্ত হবে। দেশে তদন্ত হবে, আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক পুরনো দল, আমরা মনে করি, সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তারা এ শিক্ষাটা গ্রহণ করবে। আমি চেষ্টা করব, যাতে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট থাকে। সে অনুযায়ী দল চালাতে পারলে চালাবেন, নয়তো বন্ধ করে দেবেন। পুলিশপ্রধানদের বলব, আপনারা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করবেন না। যাদের টার্গেট করছেন তারা আপনার সন্তান।
রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানকার পুলিশ কমিশনারকে এখনো সরানো হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমে বলেছি, এটা মার্ডার। আমরা এ ধরনের লোক চাই না, যারা গাইড করতে পারে না। তিনি বলেন, আমি আইজিপিকে অনুরোধ করব, যেসব শিক্ষার্থী রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ করছে তাদের তালিকা করে সবাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট দেবেন। এই সার্টিফিকেট যেন শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষার্থীরা নিজের টাকায় সড়কে কাজ করছে, সড়ক পরিষ্কার করছে, রং কিনে দেয়াল সুন্দর করছে। এটা যদি সরকারি প্রজেক্ট হতো তাহলে হাজার কোটি টাকা লাগত। একটা দেশে এর চেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে না।
শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গাড়িও ধরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার গাড়ি থামিয়ে বলছে পতাকাওয়ালা গাড়ি। তারপর তারা বলছে পতাকা থাক আর যাই থাক গাড়ি চেক করব। এরপর আমাকে দেখে বলল, না স্যার আপনি চলে যান। যেটা পুলিশ করতে পারত না সেটা তারা করছে। তারা কোনো চাঁদা নেয় না। কোনো দোকানে গিয়ে বলে না খাবার দাও।
এ সময় আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, আমরা ভিআইপি রোডে ইতোমধ্যে ট্রাফিক সদস্যদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত বেশি করে ফোর্স দিয়ে চালু করেছি। তিনি বলেন, আন্দোলনে সহিংসতায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে পরিদর্শক তিনজন ও দুজন র্যাব সদস্য। আহত অসংখ্য, শুধু রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালেই ৫০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ২৭ জন গুরুতর আহত, এদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন দুজন। যারা আহত হয়েছেন তাদের আমরা ফুল সাপোর্ট দিচ্ছি।