স্থায়ী সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র হত্যার তদন্তে জোর ইইউর
অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও হত্যা নিয়ে গতকাল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংকটের শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সমাধানের প্রত্যাশার কথা জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে হত্যাকান্ডের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত সোমবার রাতে জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকেও বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়। ইইউর পররাষ্ট্র বিভাগের ওয়েবসাইটে গতকাল ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে। বিবৃতিতে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইইউ। এতে বলা হয়েছে, ২৭ জুলাই (শনিবার) লাওসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের কাছে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন জোসেপ বোরেল। তিনি বলেন, আমি এ কে আবদুল মোমেনের কাছে সেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় কর্তৃপক্ষের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ ও আইনবহির্ভূত হত্যাকান্ড সংঘটন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান আরও বলেন, এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত হত্যাকান্ড, সহিংসতা, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার ও সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়েও আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অবশ্যই এসব কর্মকান্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক, ছোট শিশুসহ অন্য ব্যক্তিদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বহু ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর পূর্ণ জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন জোসেপ বোরেল। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা যেন যথাযথ আইনি সুবিধা পান, তাও নিশ্চিত করতে হবে। জোসেপ বোরেল বলেন, এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেগুলোর ওপর তাঁরা গভীরভাবে নজর রাখবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূলনীতিগুলো বিবেচনায় রেখে তাঁরা আশা করছেন, বাংলাদেশে সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানানো হবে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আবারও বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চাওয়ার কথা জানিয়েছে।
বেদান্ত প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশে প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই আমরা বর্তমান পরিস্থিতির স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার প্রতি আমাদের দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করছি। তিনি আরও বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশে আংশিকভাবে টেলিযোগাযোগ পরিষেবা চালুর বিষয়ে অবগত আছি, কিন্তু আমরা সেখানকার জনসাধারণকে সম্পূর্ণ এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবাগুলো ব্যবহার করতে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এর ফলে মার্কিন নাগরিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকরাও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার সুযোগ পাবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে চায় তাদের সব প্রচেষ্টাকে আমরা অবশ্যই সমর্থন করি। যেহেতু প্রশ্নটি কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই আমি সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না, তবে আমরা অবশ্যই কংগ্রেসে আমাদের সহকর্মীদের যেকোনো প্রশ্নের প্রতিক্রিয়া গভীরভাবে জানিয়ে থাকি। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি- গত সোমবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক প্রথমে বাংলাদেশ ইস্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একটি বিবৃতি পাঠ করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বর্তমান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার তরুণ এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের গণগ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্ব এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের ওপর জোর দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সম্পর্কে সামনে আসা নানা রিপোর্টের বিষয়েও তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি সহিংসতার সমস্ত কর্মকান্ডের অবিলম্বে, স্বচ্ছভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার জন্য এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমরা রাজধানী ঢাকা এবং এখানে নিউইয়র্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে মানবাধিকারকে সম্মান ও সমুন্নত রাখার বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করি। জাতিসংঘ-চিহ্নিত যানবাহন আর বাংলাদেশে (বিক্ষোভ দমনে) মোতায়েন করা হচ্ছে না বলে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিবৃতিও আমরা নোট করেছি। আমরা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি এবং পুনর্ব্যক্ত করছি, জাতিসংঘের সৈন্য-পুলিশ প্রেরণকারী দেশগুলোকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অপারেশনে তাদের মোতায়েনের প্রেক্ষাপটে শান্তিরক্ষী হিসেবে বাধ্যতামূলক কাজগুলো সম্পাদন করার সময়ই কেবল জাতিসংঘের চিহ্ন-সংবলিত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে।