পুলিশের দীর্ঘ কর্মজীবনের বাস্তব হৃদয় বিদারক ঘটনা লেখকঃ- মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার) পিপিএম -সেবা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ

শেখ জিকু আলম, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:
কোটর থেকে বের হওয়া দুইটা চোখ আর আধ হাত বের হওয়া জিহ্বা দেখে জ্ঞান হারালো সুলেমান। ফযরের নামাযের জন্য আসছিলো সে। তবে মূর্ছা যাওয়ার আগেও মা গো বলে একটা বিকট চিৎকার দিতে পেরেছিলো সুলেমান। এরপর তার আর কিছুই মনে নেই। বিকট চিৎকার শুনে মসজিদের মোয়াজ্জিন সালাম হুযুর দৌড়ে বের হয়ে আসলেন মজসিদ থেকে বাহিরে। অন্ধকারের মধ্য মোয়াজ্জিন কিছুই খুঁজে না পেয়ে আবার ফিরে গেলেন মসজিদে। তখন ফজরের আযানটা দেওয়ার কিছুক্ষণ বাকি রয়েছে। যথা সময়ে সুললিল মধুর কণ্ঠে ফজরের আযানের জন্য মোয়াজ্জিন সকলকে ডাকছেন – হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ। আযানের পরে ধীরে ধীরে নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশ করলেন তখন পাঁচ ছয়জন মুসুল্লী। মোয়াজ্জিন হুযুরের মুখে বিকট চিৎকারের কথা শুনে তারাও বের হলেন টর্চ লাইট নিয়ে। হাত পঞ্চাশেক দূরেই মিলল সুলেমানের দেহ। উপড় হয়ে পড়ে গোঙাচ্ছে তখন সুলেমান। তবে ধড়ে তখনও প্রাণ আছে। চোখে সামান্য পানির ঝটকা দিতেই সম্বিৎ ফিরে পেলেন তিনি। ভয়ে আতঙ্কে মুখটা পাঙশুটে হয়ে আছে। শুধু আঙুল দিয়ে নদীর পাশের কাশ বনের দিকে একবার ইশারা করেই জ্ঞান হারালেন তিনি। এরমধ্যেই আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে। দুই তিনজন কাশবনের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর যে দৃশ্য দেখলেন সকলে সেটি কারও কল্পনাতেও ছিল না কোনদিন। সুবহে সাদিকের লাল আভায় দেখা গেল অসম্ভব রূপবতী এক তরুনীর নিথর দেহ। হাতে মেহেদীর আলপনা আকানো রয়েছে, ঠোঁটে লিপস্টিক আর পরনে নতুন শাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবরটা সারা গ্রামে প্রচার হয়ে গেল। একজন বলল- আরে, এ তো আমাদের সামাদের মেয়ে নীপা। খুব সুরেলা কন্ঠে গান গায় মেয়েটা। কে এমন নিষ্ঠুর কাজ করলো মেয়েটার। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক নীপার বাবা সামাদ ছুটে এলেন ঘটনাস্থলে। হতবাগ হয়ে মেয়ের পাশেই বসে পড়লেন। মাথাটা কোলের তুলে নিয়ে এতটুকুই বললেন- এ তুই কি করলি শরীফ? মেরেই যদি ফেলবি তবে ভালোবেসে বিয়ে করলি কেন? আমার মেয়েটা তো মা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো। পেটে তার পাঁচ মাসের বাচ্চা। এ তুই কি করলি শরীফ বলে অঝোরে কাঁদতে থাকলেন। এরপর যথা নিয়মে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানায় মামলা রুজু হল। নীপার স্বামী শরীফকে আর তার ভাবী মর্জিনাকে আসামী করে মামলা দায়ের করলো নীপার বাবা। ঘটনার পর থেকেই নীপার স্বামী শরীফ পলাতক ছিল। কিন্তু শেষ মেশ ঠিকই পুলিশের জালে ধরা পড়লো সে। পরবর্তীতে তার ভাবী মর্জিনাও আটক হলো। মাস তিনেক হাজত খেটে বের হয়ে আসে মর্জিনা এবং পাঁচ বছর হাজত খেটে বের হয় শরীফ। তারপর থেকেই সে পলাতক। আসামীর অনুপস্থিতিতেই চলতে লাগলো বিচার কার্যক্রম। যাকে বলে ইন এবসেনসিয়া ট্রায়াল। ২০ বছর পর মামলার রায় হল। শরীফের ফাঁসির আদেশ হল। কিন্তু, সে পলাতকই থেকে গেল। নির্মম ঘটনাটি এখানেই শেষ হলেও জানতে বড় হচ্ছে হয় কি ঘটেছিল সেদিন নীপার সাথে? কেন তাকে হত্যা করা হল? নীপার জা মর্জিনা কেন আসামী হয়েছিল? শরীফই বা এখন কোথায়? জানতে হলে পড়তে থাকুন। সময়টা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি। নির্মম ঘটনাটি ঘটেছিল মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানায়। গ্রামের নাম শিমুলতলী। এই গ্রামের দুই কিশোর কিশোরী রোজ এক সাথে স্কুলে যেত। এ পাড়া আর ওপাড়া তাদের বাড়ির দূরত্ব। ভারী ভাব দুইজনের মধ্যে। মানিকজোড় ছিল তারা দুজন। অনেকটা নাটক সিনেমার জুটির মত। এক জন আরেক জনকে ছাড়া এক দন্ডও একা থাকতে পারতো না। বিষয়টা অভিভাবকেরাও জানেন। দুই পরিবারেরই ইচ্ছা বড় হলে বিয়ে দেবেন। এভাবেই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে প্রবেশ করলো দুইজন। বলে রাখা ভালো, নীপার গানের গলার কন্ঠ ছিল অসাধারণ। গ্রামগঞ্জের মেয়ে না হলে রেডিও, টেলিভিশনে গান গাইতো নিশ্চিত। কলেজে ওঠার পর নীপার ভক্ত অনুরাগী বেড়ে যেতে লাগলো। একে তো পুতুলের মত চেহারা তার উপর গানের গলাও মাশাআল্লাহ অসাধারণ। গ্রামের মেয়ে হলেও এক কথায় বলতে গেলে রূপে গুনে অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিল নীপা। এসব দেখে শরীফ বলল নীপাকে তোমার তো এখন অনেক ডিমান্ড। ক’দিন বাদে তো আর পাত্তাই দিবা না আমাকে। এ কথা শুনে নীপার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে বলল- এতই যদি ভয় তবে বিয়ে করে ফেলি। সত্যি সত্যিই তারা দুইজন বিয়ে করে ফেলল। প্রথমে পরিবারের লোকজন একটু নাখোশ থাকলেও অল্পদিনের ভেতর তারাও মেনে নিল। তবে বিয়ের পর শরীফ তার স্ত্রী নীপাকে আর পর পুরুষের সাথে মিশতে দিতে নারায। তাই নীপার কলেজ যাওয়া বন্ধ হল। নীপা হাসি মুখেই সব মেনে নিলো। কারণ, তার কাছে শরীফই সব, শরীফই তার পৃথিবী। বছর খানেক যেতেই শরীফের বড় ভাই স্বপন মারা গেলেন। রেখে গেলেন এক সন্তানসহ স্ত্রী মর্জিনাকে। মর্জিনার ছোট খাটো কাজ তাই শরীফই দেখভাল করতে লাগলো। এ পর্যন্ত ভালোই ছিল। এর মাঝে এল খুশীর সংবাদ। নীপা টের পেল তার শরীরে অস্ত্বিত্বের জানান দিচ্ছে তাদেরই ভালোবাসার ফসল। সে খুব লজ্জা আর আবেগ নিয়ে শরীফকে জানালো সমস্ত কথা। কিন্তু, শরীফের কোন ভাবান্তর হলো না। বরং কিছুটা বিরক্তই হল শরীফ। বলল- এত তাড়াতাড়ি এসব—-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *