জামালপুরে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কথা বলে শালা-দুলাভাইয়ের ঘুষ বাণিজ্য
ওসমান হারুনী, জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে উপজেলা পরিষদে কর্মরত শ্যালক মিলন মিয়া ও তার দুলাভাই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের জন্য স্থানীয়দের নিকট থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের ব্যাপারীপাড়া এলাকায়।
জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ব্যাপারীপাড়া এলাকায় একটি রাস্তা নির্মানের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাহাত এন্টারপ্রাইজ। শুধু রাস্তা নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ হলেও রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কথা বলে ব্যাপারীপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকট থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেন একই এলাকার মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে মিলন মিয়া (৪০)। তিনি জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কার্য সহকারি পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত রয়েছেন। আর এই কাজে সহযোগীতা করেন তার দুলাভাই জাহাঙ্গীর (৪৫)। রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তা খুবই কম তাই স্থানীয়রা টাকা দিলে কাজ শুরু হবে এই কথা বলে ওই এলাকার প্রায় ১শ জনের নিকট থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করেন শ্যালক মিলন মিয়া ও তার দুলাভাই জাহাঙ্গীর। রাস্তা ও ড্রেন নির্মানের কথা বলে প্রত্যেকের নিকট থেকে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন দুলাভাই ও শ্যালক। তবে পরবর্তীতে সরকারি অর্থে শুধুমাত্র রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হলে স্থানীয়রা অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি টের পান। স্থানীয় ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সরকারি অর্থে যদি কাজ হয় তাহলে তাদের টাকা গেল কোথায়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবী করেন ভূক্তভোগীরা। ব্যাপরীপাড়া এলাকার ২৫০ মিটার ও পৃথক আরও দুইটি রাস্তাসহ মোট এক হাজার মিটার রাস্তা নির্মানের জন্য মোট ৮০ লাখ টাকায় কাজটি পায় রাহাত এন্টারপ্রাইজ।
ব্যাপারীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ভূক্তভোগী মো: মালেক জানান, রাস্তা এবং ড্রেন নির্মাণের জন্য আমরা তিন পরিবার মিলে জাহাঙ্গীরকে ছয় হাজার টাকা দিয়েছি। এছাড়াও নির্মাণ কাজের জন্য আমার বাড়ির দেয়াল ভেঙে যায়গা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু রাস্তার কাজ করলেও ড্রেন নির্মাণ করেনি, পরে আমি নিজের টাকায় ড্রেন নির্মাণ করি। রাস্তার কাজ একদম নি¤œমানের হয়েছে। এখন রাস্তা যদি ভেঙে যায় সেই অজুহাতে মিলন মিয়া ও জাহাঙ্গীর এই রাস্তা দিয়ে কোন গাড়িও চলাচল করতে দেয়না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে সরকারি টাকায় রাস্তা নির্মাণ হয়েছে তাহলে আমাদের নিকট থেকে যে টাকা নিল সেই টাকা কোথায় গেল? আরেক ভূক্তভোগী মোহাব্বত জানান, আমার কাছে টাকা চেয়েছিলো কিন্তু আমি টাকা দিতে পারি নাই, তাই আমার বাড়ির সামনে ড্রেনের কাজ না করে অসম্পূর্ণ করে রেখেছে। আমাদের বাড়ির চারপাশে এখন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আমি আমার আট মাসের বাচ্চা নিয়ে খুব বিপদে আছি, কখন জানি পানিতে পড়ে যায়। মোছা: রোকেয়া জানান, রাস্তা নির্মাণ করেছে ভালো কথা, কিন্তু ড্রেন না থাকায় পানি নিষ্কাশন না হয়। আমাদের নিকট থেকে কাজের কথা বলে টাকাও নিয়েছে। পরে জানলান যে সরকারি টাকায় রাস্তার কাজ হচ্ছে, তাহলে আমাদের টাকা কোথায় গেল?
একই এলাকার সানজিদুল জানান, রাস্তা নির্মাণের জন্য টাকা নিয়েও নিম্ন মানের কাজ করেছে। মাত্র দেড় মাস আগে রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনই বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কার্য সহকারি পদে কর্মরত মিলন মিয়া জানান, আমি কোন টাকা আদায় করিনি, আমার নামে অন্য কেউ টাকা তুলতে পারে। ব্যাক্তিগত আক্রোশ থেকে আমি ও আমার দুলাভাইয়ের নামে এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাহাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাহাত জানান, পৃথক তিনটি রাস্তার এক হাজার মিটারের জন্য মোট ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিলো। ব্যাপারীপাড়া এলাকায় শুধুমাত্র ২৫০ মিটার রাস্তা নির্মানের জন্য সাড়ে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিলো। আমরা শুধু রাস্তার কাজ করেছি, স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে ড্রেনের কাজ করেছে। ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি। রাস্তা নির্মাণের জন্য স্থানীয়দের নিকট থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি তিনি জানেন না।
জামালপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আরিফুর রহমান বলেন, রাস্তার কাজের জন্য অর্থ আদায়ের বিষয়ে শুনেছি, তবে এ ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। রাস্তাটি পরিদর্শন করব, অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেলে ও নিম্মমানের কাজ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাহ শহীদ পিংকি জানান, রাস্তার কাজের জন্য টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি টাকায় রাস্তা নির্মানের জন্য সাধারণ জনগণের টাকা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সরকারি টাকার সাথে জনগণের টাকা যুক্ত করে কোন রাস্তা নির্মাণের নিয়ম নেই।