সেনা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন শেরপুরের কৃতি সন্তান লেঃ জেনারেল ওয়াকার – উজ-জামান

মোঃ আরিফুর রহমান,স্টাফ রিপোর্টার : সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন লেঃ জেনারেল ওয়াকর- উজ- জামান। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদর স্থলাভিষিক্ত হলেন। ২৩ জুন রবিবার এক আন্তঃবাহিনীর বার্তা জনসংযোগ পরিদপ্তর ( আইএসপিআর) এ তথ্য জানানো হয়।
১১ জুন ( আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান আগামী ২৩ জুন অপরাহ্ন থেকে লেঃ জেনারেল ওয়াকার – উজ- জামান চিফ অব জেনারেল স্টাফ ( সিজিএস) কে জেনারেল পদবীতে পদন্নোতি প্রদান পূর্বক ঐ তারিখ অপরাহ্ন থেকে ৩ বছরের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ওয়াকার- উজ- জামান 1985 খ্রিস্টাব্দে ২০ ডিসেম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সদস্য হিসাবে ১৩ তম দীর্ঘমেয়াদী পোস্টের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। সামরিক জীবন শুরু থেকেই বিভিন্ন কোর্সে ভালো ফলাফলে ক্রম ধারায় তিনি ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড ও স্টাফ কলেজ মিরপুর থেকে সাফল্যের সঙ্গে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন, পরবর্তী সময়ে তিনি জয়েন্ট সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ যুক্তরাজ্য থেকেও গ্রাজুয়েট হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় প্রথম শ্রেণীতে মাস্টার্স অব ডিফেন্স স্টাডিজ (এমডিএস) সম্পূর্ণ করেন এবং যুক্তরাজ্যস্হ কিংস কলেজ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে মাস্টার্স অব আর্টস ইন ডিফেন্স স্টাডিজ ডিগ্রী অর্জন করেন।
তার দীর্ঘ ৩৯ বছরে বর্ণাঢ্য সামরিক জীবন কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষকের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। তিনি ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে 12 ফেব্রুয়ারি থেকে 2010 খ্রিস্টাব্দে ৮ জুন পর্যন্ত ১৭ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ অধিনায়ক ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এ সময় তিনি তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহ দমনে নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসার অর্জন করেন।

তিনি ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই থেকে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ১১ই নভেম্বর পর্যন্ত দুই বছরের বেশি সময় ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, জিওসি হিসাবে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ২ এপ্রিল থেকে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ বছর নবম পদাতিক ডিভিশন কমান্ড করেন। এরিয়া কমান্ড সাভার এরিয়া ও জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ( জিওসি) নবম পদাতিক ডিভিশন হিসাবে তিন বছর সফলভাবে বিজয় দিবস পেড়েড ২০১৪, ১৫ ও ১৬ এর প্যারেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। এই বিরল কৃতিত্বে স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি সেনা গৌরব পদক (এস জিপি) এ ভূষিত হন ।

স্টাফ হিসাবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত একটি ব্রিগ্রেড স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিকস( এসআইএন্ডটি) এবং সেনাসদরে বিভিন্ন পদবী ও নিয়োগের দায়িত্ব পালন করেন, এছাড়াও তিনি প্রশিক্ষক হিসেবে জেসিও, এনসিও একাডেমী( জেএনএ) স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিকস ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট এন্ড ট্রেনিং (বিপসট) এর সুনামের সঙ্গে সব পদবীর দেশি-বিদেশী সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন।
সেনা সদর সামরিক সচিবের শাখায় তিনি সহকারী সামরিক সচিব, উপসামরিক সচিব এবং সামরিক সচিব (এম এস) হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে দীর্ঘদিন কর্তব্যরত ছিলেন। সেনা সদর জিএস শাখার চিপ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি প্রধানমন্ত্রী প্রিন্সিপাল স্টাপ অফিসার ( পিএসও- এএফডি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
লেপটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার – উজ- জামান জাতিসংঘের ব্যানারে মিলিটারি অবজারভার হিসাবে এ্যংঙ্গোলাতে এবং সিনিয়র অপারেশন অফিসার হিসেবে লাইবেরীয়াতে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাবাহিনীতে তার কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি অসামান্য সেবা পদক (ওএসপি) এ ঘোষিত হন, এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে দেশে ও বিদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেমিনার, কনফারেন্স ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনেঃ
১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ সালে শেরপুর জেলার সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের ফটিয়ামারী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
ওয়াকার- উজ- জামান এর সহধর্মিণী বেগম সারাহনাজ কমলিকা। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের কন্যা।যিনি ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চাচা । তিনি এবং সারাহনাজ কমলিকা জামান দুই কন্যা সন্তানের জনক/ জননী। ১/ সামিহা রাইসা জামান এবং ২/সাইরা ইবনাত জামান
তার এই অর্জনে শেরপুর জেলার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সেই সাথে আনন্দে উদ্ভাসিত হচ্ছে শেরপুর জেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *