তাপমাত্রা কমতেই বাড়ছে মশার উৎপাত, চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু
ডেস্ক রিপোর্ট: এপ্রিলজুড়ে দাবদাহে পুড়েছে দেশের অধিকাংশ এলাকা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। তীব্র গরমে মানুষের সীমাহীন কষ্ট হলেও হঠাৎ করেই যেন কমে গিয়েছিল মশার উৎপাত। এ সময় রাজধানীর অনেক এলাকার বাসিন্দারা মশারি ছাড়াই ঘুমাতে গেছেন। তবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠান্ডা হতেই ফের বাড়তে শুরু করেছে মশা। সেই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। সিটি করপোরেশন মাঝে-মধ্যে অভিযানে গেলেই মিলছে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার লার্ভা।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাপমাত্রার সঙ্গে মশার প্রজননের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বাড়ে। যেহেতু এপ্রিলজুড়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির বেশি ছিল, তাই মশা সেভাবে প্রজনন ঘটাতে পারেনি। এ কারণেই মশা কমে গিয়েছিল। এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাপমাত্রাও কমতে শুরু করেছে। সব মিলে মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাই মশা বাড়বে। যদিও এখন সারা বছরই ডেঙ্গু হচ্ছে। তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুর পিক সিজন।
ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা দমনে এখনই জোরেশোরে মাঠে নামলে কাজটা সহজ হবে। দেরি হলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তখন ডেঙ্গুতে প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়বে। তাই বৃষ্টির পানি জমে এমন ছোট-বড় সব পাত্র অপসারণ করতে হবে। যেগুলো সরানো যাবে না, সেখানে লার্ভিসাইডিং করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে মশা নিধনে সঠিক কীটনাশকের ব্যবহার ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত মশা নিধন অভিযান চালাতে হবে। পাড়া-মহল্লায় সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত চলতি বছর দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৬০ জন। মারা গেছেন ২৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১১৯ জন। শুধু ঢাকা সিটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯৬ জন, যার মধ্যে উত্তর সিটিতে ৩৩৩ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৪৬৩ জন। চলতি মে মাসের আট দিনে সারা দেশে ১৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন চারজন। সর্বোচ্চ ৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ২০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ছয়জন ও খুলনা বিভাগে চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এই আট দিনে। এদিকে এখনো ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে মশা নিধনে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে মাঝে-মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন এডিস মশার লার্ভা খুঁজতে অভিযানে নামলে খালি হাতে ফিরছে না। গত সোমবার কুড়িলে কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এক বাড়িওয়ালাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ও আরেক বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা করে উত্তর সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে নির্মাণাধীন ভবনে এডিসের লার্ভা পেলে নির্মাণকাজ বন্ধ ছাড়াও জেল-জরিমানার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশা নিধনে দুই সিটিতেই তেমন কোনো তৎপরতা এপ্রিলজুড়ে দেখা যায়নি। তবুও কমে গিয়েছিল মশা। গত তিন-চার দিন হঠাৎ করেই মশার উৎপাত বেড়েছে। এখনো মশা নিধনে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সরেজমিনে গতকাল সন্ধ্যায় কুড়িল ৩০০ ফুট শেখ হাসিনা সরণিতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ সড়কটির সৌন্দর্য দেখতে এসেছেন। ছবি তুলছেন। তবে মশার উৎপাতে কেউই বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা বলেন, এপ্রিলে মশারি টাঙাতে হয়নি। গত কয়েকদিন মশারি টাঙাচ্ছেন। তবুও তার বাসায় চার সদস্যের মধ্যে তিনজনেরই এখন জ্বর। তাদের মধ্যে একজনের ডেঙ্গু পজিটিভ এসেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ ফারজানা ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এপ্রিলে যে মশাগুলো ডিম পেড়ে মারা গেছে, উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় সেই ডিম থেকেই এখন মশা হচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় এপ্রিলে ডিমগুলো ফুটতে পারেনি। এখন যেখানেই বৃষ্টির পানি জমবে, সেখানেই এডিস মশা বাড়বে।