বাড়ল জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম
ডেস্ক রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেনে আড়াই টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ দাম আজ থেকেই কার্যকর হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অপরদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে শিল্প, গৃহস্থালি, সার উৎপাদন, সিএনজি, বাণিজ্যিক ও চা-শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জ্বালানি তেল ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যানবাহন ও শিল্পকারখানায়। শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে। ভাড়া বাড়বে যানবাহনের।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকার মার্চ থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলার আলোকে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাইসিং ফর্মুলায় ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১০৬ থেকে ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৭, পেট্রোল ১২২ থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা এবং অকটেন ১২৬ থেকে বাড়িয়ে ১২৮ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতের কলকাতায় বর্তমানে ডিজেল লিটারপ্রতি ৯০.৭৬ রুপি (বাংলাদেশি টাকায় ১৩০ টাকা ৬৯ পয়সা) এবং পেট্রোল ১০৩.৯৪ রুপিতে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৯ টাকা ৬৭ পয়সা) বিক্রয় করা হচ্ছে (১ ভারতীয় রুপি সমান গড়ে ১.৪৪ টাকা)। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দুবার জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পর এবার দাম বাড়ল। এপ্রিলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে কমানো হয়েছিল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম, তবে অপরিবর্তিত ছিল অকটেন ও পেট্রোলের। এপ্রিলে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ২ টাকা ২৫ পয়সা কমিয়ে ১০৬ এবং কেরোসিন ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ২ টাকা ২৫ পয়সা কমিয়ে ১০৬ টাকা সমন্বয় করা হয়েছিল। জানা যায়, সরকার জ্বালানি তেলের দামে ভর্তুকি প্রদান থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে আইএমএফ-এর চাপও রয়েছে। ‘জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ নির্দেশিকা’ প্রজ্ঞাপন ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ফর্মুলা অনুযায়ী, প্রতিমাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় করা হবে। গেজেট অনুযায়ী, বিপিসি ও অন্যদের কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু আমদানি মূল্যের তারতম্য প্রতিমাসে কমবেশি হবে।
এর আগে, ৩১ মার্চ লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২ টাকা ২৫ পয়সা কমিয়ে ১০৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ওই দফায় পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানো হয়নি। তারও আগে ৭ মার্চ জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। তখন লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ থেকে কমিয়ে ১০৮.২৫ টাকা, পেট্রোল ১২৫ থেকে কমিয়ে ১২২ এবং অকটেন ১৩০ থেকে কমিয়ে ১২৬ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
তবে নজিরবিহীন দাম বাড়ানো হয়েছিল ২০২২ সালের ৫ আগস্ট রাতে। তখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জারি করা আদেশে ডিজেল ও কেরোসিন লিটারপ্রতি ৩৪ এবং পেট্রোল ও অকটেনে ৪৬ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১১৪ টাকা লিটার, পেট্রোল ১৩০ এবং অকটেন ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই দাম বৃদ্ধির পর গণপরিবহণের ভাড়া বেড়েছিল সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকায় করা হয়। ওই সময়েও পরিবহণ ভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ।
জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে, অকটেন ও পেট্রোল ব্যক্তিগত যানবাহনে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হয় বিধায় এর মূল্য বিলাস দ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসাবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে বেশি রাখা হয়।
ফর্মুলা অনুযায়ী, অকটেনের মূল্য নির্ধারণকালে ডিজেলের সঙ্গে পার্থক্য লিটারপ্রতি ন্যূনতম ১০ টাকা যেন থাকে, সেজন্য প্রাইসিং ফর্মুলায় ‘?’ ফ্যাক্টর প্রযোজ্য হবে।
বিদ্যুৎ এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ট্যারিফ সমন্বয়ের প্রজ্ঞাপন : গ্যাস খাতে ভর্তুকি সীমিত রাখার লক্ষ্যে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস বিক্রি বাড়িয়েছে। মে ২০২৪ বিল মাস থেকে শুধু বিদ্যুৎ শ্রেণিতে ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ শ্রেণিতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য যথাক্রমে ১৪.৭৫ টাকা পার ঘনমিটার এবং ৩০.৭৫ টাকা পার ঘনমিটার থেকে প্রতি ঘনমিটারে ০.৭৫ টাকা বৃদ্ধি করে বিদ্যুৎ শ্রেণিতে গ্যাসের মূল্য ১৫.৫০ টাকা পার ঘনমিটার এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ শ্রেণিতে গ্যাসের মূল্য ৩১.৫০ টাকা পার ঘনমিটারে নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য শ্রেণিতে গ্যাসের মূল্য অপরিবর্তিত থাকবে।
বাংলাদেশে গ্যাসের ব্যবহারকারীদের ৮টি গ্রাহকশ্রেণি রয়েছে। তন্মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৭, শিল্পে ২৩, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১৮, গৃহস্থালিতে ১০, সার উৎপাদনে ৭, সিএনজিতে ৪ এবং বাণিজ্যিক ও চা-শিল্পে ১ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ মূল্যের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের পার্থক্যের কারণে সরকারকে এ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আর্থিক ক্ষতি/ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৬,৫৭০.৫৪ কোটি টাকা। কৃষি সেচ মৌসুম, রমজান মাস ও গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা আরও বেশি থাকে। শিল্প, গৃহস্থালি, সার উৎপাদন, সিএনজি, বাণিজ্যিক ও চা-শিল্পে মূল্য সমন্বয় অপরিবর্তিত রয়েছে।