অনলাইনে পাঠ চালুর দাবি শিক্ষক অভিভাবকদের
ডেস্ক রিপোর্ট : সারা দেশে তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। চলমান তাপমাত্রায় শিক্ষার্থীসহ অনেকে হিটস্ট্রোকে মারা গেছে। শিগগিরই এ তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা হিট অ্যালার্ট জারি করলেও রোববার থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে যাচ্ছে। গরমে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে কোমলমতি শিশুরা। এ কারণে অধিকাংশ অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদবোধ করছেন না। চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে অনলাইনে ক্লাস চালু করার দাবি জানিয়েছে অভিভাভাবক ঐক্য ফোরাম।
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ২৭ এপ্রিল (শনিবার) পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। এদিকে এমন গরম অব্যাহত থাকলেও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ছুটি আরও বাড়ানোর সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ না রেখে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার দাবি জানিয়েছে ‘অভিভাবক ঐক্য ফোরাম’। মঙ্গলবার ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলুর সই করা এক বিবৃতিতে এ দাবি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়-সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাত দিনের জন্য বন্ধের দাবি জানিয়েছিল অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষণা দেয়। হিট অ্যালার্ট জারি অব্যাহত থাকায় সামনে আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছেন অভিভাবকরা। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ যুগান্তরকে বলেন, তীব্র তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে স্কুল খোলা রাখলেও হাফ ক্লাস বা অনলাইনে ক্লাস নেওয়া উচিত। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ ন ম সামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, বাচ্চারা স্কুলে এলে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে বেশি। তাদের নিষেধ করে রাখা যায় না। এ তীব্র তাপমাত্রায় স্কুল খোলা থাকলে বাচ্চাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে নেসারুল হক নামে এক অভিভাবক যুগান্তরকে বলেন, এ তাপমাত্রায় স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। যেখানে বাচ্চাদের বাসায় সুস্থ রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে স্কুলে পাঠানো এক ধরনে মৃত্যুর ঝুঁকি নেওয়া। যদি কোনো বাচ্চা হিটস্ট্রোকে মারা যায় সে দায় কে নেবে! মিজানুর রহমান নামে ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে স্কুল খোলা রাখলেও যেন সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকে। শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণ করতে অনলাইনে ক্লাস অব্যাহত রাখার মত দিয়েছেন তিনি।
এদিকে এক সপ্তাহের ছুটি শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামীকাল রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রাথমিকের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রোববার খোলার কথা রয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রা পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রোববার খুলবে কিনা এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আজ শনিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে তীব্র দাবদাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী তারিখ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহে ক্লাস বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। এখনো সেই সিদ্ধান্ত বহাল। এছাড়া তীব্র গরমে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এখনো সেই সিদ্ধান্ত বহাল। তবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।