বনভূমি দখল করে চাষাবাদ, একই জমিতে বন্যহাতির মরণ ফাঁদ
মোঃ জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া : সরকারি বনভূমি দখল করে লাগানো হয়েছে ধানক্ষেত। এ ক্ষেত রক্ষার্থে বন্য হাতির জন্য বসানো হয়েছে মরণ ফাঁদ। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ আওতাধীন চকরিয়াতে পাওয়া গেছে এমনই হিংস্রাত্মক চিত্র। সরেজমিনে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট দরগাহর গেইটের আনুমানিক তিন’শ মিটার উত্তরে সুন্দরী বাগান নামক এলাকা। একসময় এখানে সুন্দরী গাছে ভরপুর ছিল বলে বনবিভাগের এ জায়গাটি নাম সুন্দরী বাগান। শতশত সুন্দরী গাছে ভরপুর এ বাগানটি বর্তমানে কোনপ্রকার অস্তিত্ব নেই। সর্বশেষ খাড়া অবস্থায় রয়েছে দু’টি সুন্দরী গাছ। বনবিভাগের পক্ষ থেকে ধ্বংসাবশেষ গাছগুলোতে লাগানো হয়েছে দুটি সাইনবোর্ড। গাছ দুটো দাঁড়িয়ে থাকা এই বনভূমি এখন জনভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিগত সময়ে ভূমিদস্যুরা সব সুন্দরী গাছ ধ্বংস করে সেখানে করেছে চাষাবাদ। অন্তত পাঁচ একর পরিমাণ এই বনভূমি জবরদখলকারী চক্র ভাগবাটোয়ারা করে ভোগদখল করছে বলে জানায় স্থানীয় একটি সুত্র। সরেজমিনে লক্ষ্য করা গেছে, ওই বনভূমির একপাশে রয়েছে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক এবং অপর পাশে রয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। বনভূমির এই রেলপথ অংশে ধানক্ষেত পাহারা দিতে বসানো হয়েছে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর। অপরপ্রান্তে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ব্রিজের কিনারায় পাওয়া গেছে হাতি মারার ফাঁদ। সেখানে প্রলেপ বিহীন বেশকিছু উন্মুক্ত তাঁর কয়েকটি গাছের সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে। মুলত ধানচাষীরা এসব “তাঁর” হাতির জন্য মরণ ফাঁদ বসাতে ব্যবহার করা হয়। আরো দেখা গেছে, বনভূমির এই ধানক্ষেত রাতে আলোকিত করতে দেওয়া হয়েছে ২২০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সংযোগ। অথচ সরকার বন্য হাতি রক্ষায় সেমিনার, লিপলেট বিতরণ, ক্ষতিপূরণ প্রদান সহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ধারাগুলো যথাযথ প্রয়োগ করে আসছে বনবিভাগ। এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক কিনারায় বসানো হাতি মারার ফাঁদ সংলগ্ন ব্রিজের নিছে পাওয়া গেছে হাতি চলাচলের তরতাজা পদচিহ্ন। ধারণা করা হচ্ছে অল্পের জন্য কোন না কোন হাতি এই মরণ ফাঁদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। স্থানীয় মানুষের সাথে এব্যপারে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরী বাগানটি ছিল হাতি চলাচলের রাস্তা। সেখানে বনবিভাগের সতর্কতা মূলক সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল। কারা সুন্দরী বাগান উজাড় করেছে ? সুন্দরী বাগান কারা দখল করেছে ? ধানক্ষেতে কারা হাতি মারার ফাঁদ বসিয়েছে ? এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভয়ে তাদের কেউ মুখ খোলতে রাজি হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানায়, এসকল কর্মকাণ্ডে ইউনিয়নের এক মেম্বার নেতৃত্ব দেন। তিনি সরকারী রাজনৈতিক দল ও বনবিভাগের সাথে যোগসাজশ করে অপকর্ম গুলো চালিয়ে আসছে। এলাকার সচেতন মহল বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তার সৎ সাহসের প্রশংসা করে বলেন, চেষ্টা করলে জবরদখল হওয়া এসব বনভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। সেখানে গাছ লাগিয়ে পুনরায় সুন্দরী বাগানের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনার দাবি জানায় তারা। এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিন জানান, ইতিপূর্বে সেখানে সুন্দরী বাগান ছিল বলে জানা গেছে। এই বনভূমি উদ্ধারকল্পে সেখানে লাগানোর জন্য সুন্দরী গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে না। হাতি মারার ফাঁদ সম্পর্কে তিনি জড়িতদের পরিচয় সনাক্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।