তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ
ডেস্ক রিপোর্ট: তীব্র দাবদাহে যেন সারা দেশ পুড়ছে। দিনদিন তাপমাত্রার পারদ উপরের দিকে উঠছে। গরম ও অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। বাতাসে ‘আগুনের ফুলকি’ উড়ছে। প্রখর তাপে বিপর্যস্ত জনজীবন। বিশেষ করে নাভিশ্বাস উঠেছে শ্রমজীবী মানুষের। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না অনেকেই। রৌদ্রের প্রখর তাপে চুয়াডাঙ্গাসহ কয়েকটি জেলায় সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় ছিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪৪টি পর্যবেক্ষণাগারের মধ্যে ১২টিতে শনিবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে গণ্য করা হয়। চলমান দাবদাহ তীব্র আকার ধারণ করায় দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকায় মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে। এ বৈরী আবহাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর ও পাবনায় হিট স্ট্রোকে তিনজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হাসপাতালগুলোয় অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাতদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে ঈদের ছুটির পর এসব প্রতিষ্ঠান আজ খুলছে না। একই সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতিপ্রয়োজন ছাড়া বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৩১ মার্চ থেকে কয়েকদিন দেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজ করে। বৃষ্টির কারণে মাঝে কয়েকদিন আবহাওয়া ঠান্ডা থাকলেও ১৩ এপ্রিল থেকে আবারও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। শনিবার কয়েক জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। সামনের দিনগুলোয় তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। তখন ৪২-৪৪ ডিগ্রি সেলিয়াসে ওঠানামা করতে পারে। অর্থাৎ হিট অ্যালার্ট বহাল থাকবে। এপ্রিলজুড়েই এ অবস্থা চলবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, এপ্রিলে তাপমাত্রা বেশি থাকে। বর্তমানে যে তাপমাত্রা রয়েছে, তা আরও বাড়তে পারে। তাপমাত্রা বাড়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে ৪২-৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করার আভাস রয়েছে। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দু-এক জায়গায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে তা তাপমাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গায় ছিল ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকায় মানুষের শরীরে অস্বস্তি বেশি ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের শনিবার সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৪৪টি পর্যবেক্ষণাগারের মধ্যে ১২টিতেই ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা ছিল। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৪০-৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই তা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে গণ্য করা হয়। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলে তা অতি তীব্র দাবদাহ বলা হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ : রমজান, ঈদ ও বৈশাখের টানা ২৬ দিনের ছুটি শেষে আজ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা ছিল। গরমের তীব্রতার কারণে সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ২৮ এপ্রিল যথারীতি খুলবে। একই সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সারা দেশের কলেজগুলোয় ক্লাসও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও শনিবার সকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি (প্রাত্যহিক সমাবেশ) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে দুপুরে ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মন্ত্রণালয়। ওই সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চলমান দাবদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আজ ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরও তাদের বিবৃতিতে ছুটি বাড়ানোর কথা জানায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে চলমান তাপপ্রবাহ ও হিটওয়েভের পূর্বাভাস দেখে কয়েকদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে পুনরায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হতে পারে।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে একধরনের স্বস্তি দেখা গেছে। তারা বলছেন, গরমে এমনিতে অস্বস্তিতে থাকতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে ক্লাস-পরীক্ষাসহ নানা ধরনের চাপ থাকবে। তাই তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় একধরনের প্রশান্তি কাজ করছে তাদের মাঝে।
হিট স্ট্রোকে তিনজনের মৃত্যু : তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় জাকির হোসেন নামের একজন কৃষক, গাজীপুরে সোহেল রানা নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি এবং পাবনায় সুকুমার দাস নামের একজন মারা গেছেন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবারও পাবনায় একজন হিট স্ট্রোক করে মারা যান।