গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অনড় থাকবে ইসি
ডেস্ক রিপোর্ট: উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা থাকলেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় থাকবে নির্বাচন কমিশন। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। এছাড়া ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারাও এবারে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইছেন না; সহযোগী সংগঠনগুলোর তৃণমূল নেতারা প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে। রয়েছে দলীয় কোন্দল দেখা দেওয়ার শঙ্কাও। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবারে চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৮ মে প্রথম ধাপের নির্বাচন হবে। উপজেলা নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে অনড় থাকবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনাররা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করছে। আমি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বৈঠক শেষ করব।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী যে হোক; নির্বাচনি আইনকানুন শতভাগ মেনে চলতে হবে। নির্বাচনি আচররণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। পূর্বের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের উপজেলা নির্বাচন আরও ভালো হবে।
সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে কমিশন সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। এবারেই প্রথম সব প্রার্থীর জন্য অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে কেউ কাউকে প্রার্থী হতে বাধা দিতে পারবে না এবং জোড়পূর্বক প্রার্থিতা প্রত্যাহার করাতেও পারবে না। এ কারণে উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দে আগেই প্রার্থীরা ডিজিটাল প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন। আশা করছি- নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতায় জড়াবেন না। নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটলে তাৎক্ষণিক অ্যাকশনে যাবে কমিশন।
বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপজেলা পরিষদের তিন পদেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে পোস্টার-বিল বোর্ডে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই পদেও অনেক নেতারাই নির্বাচনের অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম; তবে স্থানীয় নেতারা উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনেক নেতাই বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দলের বহিষ্কারের আদেশ আসলেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। অনেক উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতারা শুভেচ্ছা বিনিময়ের পোস্টার টাঙিয়েছেন।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণের তারিখ রেখে তফসিল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ হবে। এ ধাপে ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে; বাকি ১৩০টি উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করবে ইসি। ঘোষিত তাফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৩ এপ্রিল এবং ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনে তিন পদে প্রার্থীর ছড়াছড়ি হবে। একদিকে দলীয় প্রতীক না থাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা সবাই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। অনেক সময় বিরোধীরা মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা দেন; এবারে সেই বাধা দেওয়ার সুুযোগ নেই। কেননা সব প্রার্থীকেই অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। তাই কেউ চাইলেও প্রার্থী হতে বাধা দিতে পারবে না। এছাড়া শিথিল করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর তালিকা জমা দেওয়ার বিধান বাদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এর আগে বেশ কিছু সংশোধন এনে ‘উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণবিধি’ জারি করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের ভোট ২৩ মে তৃতীয় ধাপের ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের এ সাধারণ নির্বাচন হবে।
১৫২টি উপজেলার মধ্যে ৯টি জেলার ২২টি উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে। জেলাগুলো হলো- কক্সবাজার, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, জামালপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর, পিরোজপুর ও মানিকগঞ্জ। বাকি ১৩০টি উপজেলার ভোট হবে কাগজে ব্যালটে। প্রসঙ্গত, মে মাসে চার ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে ইসি।