উৎপাদনে ঘাটতি, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে লোডশেডিং
ডেস্ক রিপোর্ট: বাড়তি চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে উৎপাদন করতে না পারায় উৎপাদন ঘাটতি হচ্ছে বিদ্যুতের। এতে বিতরণ কম্পানিগুলোকে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। রাজধানীতে লোডশেডিং না হলেও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগের গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে লোডশেডিং।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রক্ষণাবেক্ষণের নিয়মিত কাজের জন্য একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল বন্ধ রয়েছে। এতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাস সরবরাহে কিছুটা সংকট রয়েছে। আবার রমজান মাস ও সেচ মৌসুম শুরু হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক রাখতে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এর পরও কিছুটা ঘাটতি থাকছে। বন্ধ টার্মিনালটি চলতি মার্চের শেষ দিকে চালু হতে পারে বলে জানান তাঁরা।
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। পিজিসিবির তথ্য মতে, গতকাল সোমবার বিকেল ৩টার দিকে ৭৫৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং উত্পাদন হয় ১১ হাজার ৬০৭ মেগাওয়াট।
গতকাল দুপুর ১টার দিকে ৫৬৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ১০০ মেগাওয়াট, কিন্তু ১১ হাজার ৫৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা শাখা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এতে ঢাকার বাইরের কিছু এলাকায় হয়তো লোডশেডিং হচ্ছে। এই সমস্যা শিগগির কেটে যাবে। দেশের ৮০ শতাংশের বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এই প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ এলাকায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। বিতরণ কম্পানিটি গতকাল বিকেল ৩টার দিকে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করেছে। এ সময় সারা দেশে তাদের চাহিদা ছিল ছয় হাজার ৯৬৩ মেগাওয়াট, সরবরাহ হয়েছে পাঁচ হাজার ৯২৯ মেগাওয়াট। গতকাল আরইবির বিতরণ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে ঢাকা জোনে। সবচেয়ে কম বরিশাল জোনে।
আরইবির কর্মকর্তারা বলছেন, রমজান ও সেচ মৌসুমের কারণে এখন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তার পরও সেই তুলনায় উৎপাদন বাড়াচ্ছে না বিপিডিবি। ফলে দিনরাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
ঢাকার বাইরের লোডশেডিংয়ের খবর পেলেও রাজধানীতে এখনো তেমনভাবে লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কাওসার আমীর আলী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজধানীতে এখনো এসির ব্যবহার সেভাবে শুরু হয়নি। এতে আমাদের বিতরণ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা তেমন বাড়েনি। চাহিদার পুরোটাই আমরা সরবরাহ করতে পেরেছি।’
চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ
চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। নগরের পাঁচলাইশ চালিতাতলী এলাকার গৃহিণী আনজুমান আরা আরজু জানান, কয়েক দিন ধরে দিনে গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। নগরসংলগ্ন হাটহাজারীর চৌধুরীহাটের পূর্বদিকে রবিবার রাত ১১টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, মাঝেমধ্যে ৩০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।
ময়মনসিংহে ঘন ঘন বিদ্যুত্ যাচ্ছে
ময়মনসিংহের গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল এই তিন উপজেলায় এখন নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে। গতকাল সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের বীর আহম্মদপুর গ্রামের চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পল্লী বিদ্যুতেরও।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পল্লী বিদ্যুত্ কার্যালয়ের ডিজিএম অনিতা বর্ধন বলেন, বর্তমানে সেচের কাজ ও গরম পড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তাই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
রংপুরে ধানের জমিতে সেচ ব্যাহত
রংপুরের গ্রামাঞ্চলে প্রতিদিন তিন থেকে চারবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন আট উপজেলার মানুষ। গ্রামবাসী বলছে, ইফতারের সময় প্রতিদিন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে না পারায় ধান চাষে সমস্যা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে কারখানায় উৎপাদন কমেছে
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পবিত্র রমজান মাসেও দিনের বড় একটা সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ইফতার ও তারাবির নামাজের সময়ও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না এলাকার মানুষজন। লোডশেডিংয়ে উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি বড় মুরগির খামার ও ডেইরি ফার্মের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া সর্বত্র পাওয়ারলুম কারখানায় উৎপাদন কমেছে।