যৌন হয়রানির দায়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষক বহিষ্কার
ডেস্ক রিপোর্ট: ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিশেষ সিন্ডিকেট সভা ডেকে এই সিদ্ধান্ত নেন।
বৃহস্পতিবার বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে ৮৪তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি এবং বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রর বিরুদ্ধে মদদদানের অভিযোগে সাজন সাহাকে স্থায়ী ও রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করার পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সিন্ডিকেট।
এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া সিন্ডিকেট সভা শেষ হয় দুপুর দেড়টায়। বহিষ্কারের ঘোষণা আসার পর উল্লাস প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফারাবী বলেন, প্রশাসনের আজকের সিদ্ধান্তে আমরা খুশি, আমরা চাই অধিকতর তদন্ত করে অপর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অভিযোগকারী ভুক্তভোগী ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি বিচার নিয়ে অনেক বেশি সন্তুষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা; যারা আমাদের সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, সিন্ডিকেট আজকের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তদন্ত সাপেক্ষে সিন্ডিকেট আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
উল্লেখ্য, ওই শিক্ষার্থীর গত ৪ মার্চ অভিযোগের প্রেক্ষিতে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে দুই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হয়। রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে দুপুরে শিক্ষার্থীরা এ বিচার না মেনে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের মাধ্যমে দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ভিসি, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারকে ভবনে রেখে প্রশাসনিক ভবনে ও প্রক্টরের অফিসে তালা দিয়ে দুপুর সাড়ে ৩টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেওয়া ও থিসিস পেপার আটকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মার্চ আন্দোলন শুরু করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেন ওই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, দেরিতে হলেও আমরা সঠিক বিচার পেয়েছি।