শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি হয়ে যা খুশি করার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার: যশোর বোর্ডের অধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি হয়েই বিধিবহির্ভূত ‘মাতব্বরি’ করা বন্ধ হচ্ছে। ইচ্ছেমতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের সুযোগও থাকছে না। প্রতিষ্ঠান প্রধানকে দিয়ে ‘চাকরবাকরের’ মতো আর ফরমায়েশ খাটানো যাবে না। এ ধরনের অপকর্ম করায় ইতিমধ্যে তিন সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। সভাপতি পদ থেকে তাদেরকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ভুবনমোহিনী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পেশীশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সভাপতি হন আরশাদ আলী বিশ্বাস। তৎকালীন এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থেকে তিনি এই অপকর্ম করেন। এরপর তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন স্থানীয় লোকজনসহ ওইস্কুলের শিক্ষকরা। তার অনৈতিক আবদার মেটাতে হিমশিম খান প্রধান শিক্ষক। সর্বশেষ, এই অত্যাচারী সভাপতির অনৈতিক খায়েশ পূরণ না করায় প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার ঘোষকে মারপিটসহ চেয়ার থেকে কান ধরে তুলে গলাধাক্কা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেন সভাপতি আরশাদ আলী। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেন। শিক্ষাবোর্ড থেকে ঘটনাটি তদন্তের জন্য খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি তদন্ত করে বোর্ডে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। সেখানে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘অসভ্য’ আচরণ করায় সভাপতির পদ থেকে আরশাদ আলী বিশ্বাসকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম তাকে কারণ দর্শানো পত্র দিয়েছেন। যার স্মারক নম্বর বিঅ-৬/৩৫, তারিখ-০৭.০৩.২০২৪। সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে ওইপত্রে।
কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর পত্র দেওয়া হয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার আলাইপুর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোকাররম হোসেনকেও। তার অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার অভিযোগে ওই এলাকার আজাদ শিকদার গং শিক্ষাবোর্ডে অভিযোগ করেন। শিক্ষবোর্ড থেকে ঘটনা তদন্তের জন্য রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন। এরপর প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মোকাররম হোসেনকে সভাপতির পদ থেকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে শোকজ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত পত্র পাওয়ার পর ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। যার স্মারক নম্বর বিঅ-০৬/৪০১০/২৮, তারিখ ২৮.০২.২০২৪।
অব্যাহতি দেওয়া হবে না কেন তা জানতে চেয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মুনছুর আলীকে। যার স্মারক নম্বর বিঅ-৬/৩৪, তারিখ-০৬.০৩.২০২৪। মুনছুর আলীকে সভাপতি করা হয় সবার অজ্ঞাতে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস হোসেন শিক্ষাবোর্ডে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় যশোর সরকারি সিটি কলেজের কৃষি শিক্ষার সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল হালিমকে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সভাপতি পদ থেকে মুনছুর আলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপর বাকি মেয়াদের জন্য সভাপতি নির্বাচন করে বোর্ডে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষককে।
অপরদিকে, নানা অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ঠাকুরকাঠি চেচুয়াখোলা ভুলবাড়িয়া গলগলিয়া আদর্শ জুনিয়র হাইস্কুলের সাময়িক বরখাস্ত কৃষি শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগম ও হিসাব সহকারী কবির হোসেনকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। যার স্মারক নম্বর বিঅ-৬/৩২, তারিখ ০৩.০৩.২০২৪।
এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা তদন্তে প্রমাণিত হলে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিধির বাইরে গিয়ে কোনো সভাপতি অনিয়ম করে তিনি ওইপদে থাকতে পারবেন না।’