পুলিশ বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীজনগণকে সেবা দিন সন্ত্রাস দমন করুনপূর্ণাঙ্গ সাইবার ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট :জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতি দমনের মধ্য দিয়ে জনগণের সেবা অব্যাহত রাখতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরকে বলব, আপনারা মানুষের সেবা করেন। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন-এটাই হচ্ছে পুলিশের মূলমন্ত্র। মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ছয় দিনব্যাপী ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে হলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা একান্তভাবে অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ বিপদে পড়লে আশ্রয় খোঁজে পুলিশের কাছে। কাজেই পুলিশ জনগণের বন্ধু, এটা সবসময় চলে আসছে এবং এটাকেই প্রতিষ্ঠা করা একান্তভাবে দরকার। সে কারণেই আমি মনে করি আমাদের পুলিশ বাহিনী তাদের সততা, পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, ত্যাগ, বীরত্ব, দেশপ্রেম ও মানবীয় মূল্যবোধ নিয়েই জনগণের সেবা করবে। এই বাহিনীকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলছি।’
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহে বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতা প্রদত্ত বক্তব্যের উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও। তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও। তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা। বাংলার মানুষ চায় তারা শান্তিতে ঘুমাক। তোমাদের কাছ থেকে আশা করে যে, চোর, বদমাশ, গুন্ডা, দুর্নীতিবাজ তাদের ওপর অত্যাচার না করে। তোমাদের কর্তব্য অনেক বেশি। জাতির পিতার ভাষণের এই মর্মবাণী ধারণ করে পুলিশের প্রতিটি সদস্য গভীর দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কাজ করে যাবে-এটাই আমার প্রত্যাশা।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সাহসী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৫ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ পদক (বিপিএম-বীরত্ব) এবং ৬০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-বীরত্ব) প্রদান করেন। এছাড়া ৯৫ জন পুলিশ সদস্য বিপিএম সেবা পদক এবং ২১০ জন পিপিএম সেবা পদক পেয়েছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন তাকে স্বাগত জানান। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ-সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে পুলিশ জনগণের পাশে দাঁড়ায়। কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ও পুলিশ বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করলে রাত-বিরাতে তারা মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমরা সবসময় চেয়েছি পুলিশ বাহিনীকে সেভাবেই গড়ে তুলতে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই দেশে ২০১৩, ’১৪, ’১৫ সাল এবং গত ’২৩ সালের ২৮ অক্টোবর অগ্নিসন্ত্রাস করে জাতীয় সম্পদগুলো নষ্ট করা হয়েছে। যানবাহনসহ বিভিন্ন অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। চলন্ত বাস ও ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।’ জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শান্তি রক্ষায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে গিয়েও যেসব পুলিশ সদস্য জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
সরকারের প্রচেষ্টা এবং পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আজকের পুলিশ বাহিনী অনেক বেশি দক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমরা যখন নতুন ধরনের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বা সাইবার ক্রাইমসহ বিভিন্ন কিছু দেখছি তার জন্য পুলিশকেও বহুমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে উপযুক্ত বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। যেমন ২০০১ সালে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ব্যাপক উত্থানে জনজীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।
আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে এন্টি টেরোরিজম পুলিশ ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করি। এছাড়া অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, এমআরটি পুলিশ গঠন করেছি। আর যাতে দ্রুত তদন্তের কাজ শেষ হয় এবং মানুষ ন্যায়বিচার পায় সেজন্য পুলিশে ইতোমধ্যে ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস) এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করেছি।’
পুলিশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাইবার অপরাধ এবং এর সঙ্গে যুক্ত ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি অপরাধ মোকাবিলায় ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন’ করা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপির সিটিটিসিসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। ১০ তলা ভবন করে রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত কমিউনিটি ব্যাংকের মাধ্যমে পুলিশ ও সাধারণ জনগণ আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন এবং পুলিশে শতভাগ রেশন চালু করা এবং অবসরপ্রাপ্ত সব পুলিশ সদস্যের আজীবন রেশনপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এসব সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে পুলিশ বাহিনী আজ একটি আধুনিক, যুগোপযোগী, দক্ষ, গতিশীল ও জনবান্ধব বাহিনী হিসাবে গড়ে উঠেছে।’
ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ : ভারতের বিমানবাহিনী প্রধান মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় শেখ হাসিনা তাকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হওয়ায় তাদের মধ্যে সহযোগিতা জরুরি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি (বিএসএমআরএএইউ) প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে নতুন মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে। এয়ার চিফ মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উন্নতির জন্য তারা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
সাক্ষাৎ করলেন আইটিএফসি সিইও : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশের জ্বালানি ঘাটতি প্রশমিত করতে অফশোর গ্যাস উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে আমাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইঞ্জিনিয়ার হানি সালেম সংসদ ভবন কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
হানি সালেম বলেন, অবকাঠামো, আইসিটি, ঋণ ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি খাত এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে তারা সর্বাত্মক সহায়তা দেবে।