শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৩৩ জন আহত
জাহাঙ্গীর হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে মাদরাসার নামে ওয়াকফ করা জমি নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩৩ জন আহত হয়েছে।
২০ জানুয়ারি শনিবার সকালে উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের গোল্লারপাড় এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় প্রায় ৪০ বছর আগে কলসপাড় ইউনিয়নের গোল্লারপাড় এবতেদায়ী মাদরাসা নামে ওই এলাকার মৃত ছফর উদ্দিন, নীল মাহমুদ ও ছাবেদ আলী মিলে মোট ১ একর ৫ শতক জমি ওয়াকফ করে দেন। বর্তমানে এবতেদায়ী মাদরাসাটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় মাদরাসার নামে ওয়াকফ করা সম্পত্তি দাতার ওয়ারিশগণ ভোগ করে আসছিল।
পরবর্তীতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এবতেদায়ী মাদরাসার পাশে গোল্লারপাড় মদিনাতুল উলুম কওমি মাদ্রাসা নামে নতুন আরেকটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে বিলুপ্ত হওয়া মাদরাসার সম্পত্তির উপার্জিত অর্থের একটা অংশ কওমি মাদরাসায় দান করে আসছিল দাতার ওয়ারিশগণ। পরবর্তীতে ওয়াকফ করা সম্পত্তির দাতার ওয়ারিশগণ উপার্জিত অর্থের অংশ ওই কওমি মাদরাসায় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে কওমি মাদরাসার সভাপতি উসমান গনি ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আলীর মাঝে বিরোধ বাঁধে।
সভাপতি উসমান গনি চলতি বোরো মৌসুমে ওই জমি চাষ করে বোরো ধান লাগানোর প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আলীর লোকজন ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার চাষ করা ওই জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করে ফেলে। এনিয়ে শনিবার সকালে সভাপতি উসমান গনির নের্তৃত্বে শতাধিক লোক সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আলী ও তার স্বজনদের বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ৩টি দোকান ঘর ও ৩টি অটোরিকশা ভাংচুর করে। ওইসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩৩ জন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়।
আহতদের মধ্যে মামুন মিয়া, আজাদ মিয়া, মাসুদ মিয়া ও বাক্কি মিয়াসহ ১০ জনকে পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোস্তফা কামাল জানান সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩ জন আহত হয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছিলেন৷ তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ৭ জন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়াও বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে কওমি মাদরাসার সভাপতি উসমান গনি ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দু’জনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার দিদারুল ইসলাম জানান সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।