রিসোর্টে রাত্রিযাপন, চাপে পড়ে কলেজছাত্রীকে বিয়ে করলেন ওসি- মিজানুর রহমান
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেস্ক : পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫-২০ দিন আগে মিজানুর রহমান জয়দেবপুর থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মানিকগঞ্জে থাকা অবস্থায় তিনি সিংগাইর থানায় এক বছর ও সদর থানায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি ঐ ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
জানা গেছে, কয়েক দিন আগে ঐ কলেজছাত্রীর অন্যত্র বিয়ের কথা শুরু হয়। এ খবর জানতে পেরে ওসি তার এক ঘনিষ্ঠ লোকের মাধ্যমে মেয়েটিকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়দেবপুর নিয়ে আসেন। ১০-১২ দিন ধরে তাকে ঐ রিসোর্টের একটি কক্ষে রাখেন তিনি। পরে মেয়েটিকে তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঐ ছাত্রী মানিকগঞ্জ না গিয়ে ওসিকে বলে যে, তাকে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু ওসি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। গত বুধবার রাতে ওসি ঐ রিসোর্টে কয়েক জন যুবক পাঠিয়ে ছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ ওঠে। মেয়েটিকে গ্রামের বাড়ি না গেলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। রাতে ঐ কলেজছাত্রী ওসির ঘনিষ্ঠ সেই ব্যক্তিকে বিষয়টি জানান। ছাত্রীর খারাপ কিছু হলে তিনি ফেঁসে যেতে পারেন এ ভয়ে ঐ ব্যক্তি গাজীপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম বুধবার রাতেই রিসোর্টে গিয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করে এসপি অফিসে নিয়ে আসেন। পরে ওসিকে এসপি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। এদিকে এই খবর শুনে ওসির প্রথম স্ত্রী জয়দেবপুর ছুটে আসেন। অন্যদিকে ঐ ছাত্রীর মা এবং এক ফুপাও সেখানে হাজির হন।
বৃহস্পতিবার দিনভর উভয় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ছাত্রী ওসির সঙ্গে বিয়ের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কলেজছাত্রীকে তার মায়ের জিম্মায় দিয়ে গাজীপুর জেলা শহরের একটি কাজী অফিসে ১০ লাখ টাকার দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কাবিননামায় নগদ ১ লাখ টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। বিয়েতে মেয়ে পক্ষের উকিল নিযুক্ত করা হয় মেয়ের ফুপা মো. কছিম উদ্দিনকে। এ সময় উভয় পক্ষের আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। কাজী অফিসের সহকারী কাজী মোস্তফা কামাল তাদের বিয়ে পড়ান। কাজী মোস্তফা কামাল তাদের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে গতকাল বিকালে জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, শুনেছি ওসিকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমি কোনো লিখিত কাগজ পাইনি। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ওসির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে মেয়েটিকে বিয়ে করেছি। বাসা ভাড়া না পাওয়ায় তাকে ঐ রিসোর্টে রেখেছিলাম। একটু ঝামেলা হয়েছিল। সব ঠিক হয়ে যাবে।’ অন্যদিকে, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী সফিকুল আলম বলেন, একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।