যশোরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মকর্তার সংবর্ধনার নামে কেশবপুরে ১৫৮ স্কুল থেকে অর্থ আদায়যাহাতে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকারা
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি : যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার-ডিপিইও মোফাজ্জেল হোসেন খানের ‘সন্তুষ্ট’ করার চেষ্টা করেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেশবপুর উপজেলা শাখা। সমগ্র আয়োজন করেন এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বাবু। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর এই আয়োজন করেন বাবু চক্র। যদিও ডিপিইও এটিকে মাসিক সমন্বয় সভার নামে চালিয়ে দেন। ব্যানারে লেখান, ‘প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে প্রধান শিক্ষকগণের অংশগ্রহণে মাসিক সমন্বয় সভা’। এই সভার আড়ালে মূলত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়; যেখানে ডিপিইওর স্ত্রী-সন্তানরা ছিলেন। যা নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপকভাবে সমালোচনা তৈরি হয়।
রটে যায়, সিগারেটের প্যাকেটে করে ডিপিইও’র নগদ টাকা আর স্ত্রীর জন্য দামি শাড়ি গ্রহণের কাহিনি। যার সবকিছুর আয়োজক ছিলেন নাজমুল হুদা বাবু নিজেই। এই অনুষ্ঠানের শেষ তুলতে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয় বলে ওইসময় প্রচার হয়েছিল। যদিও নাজমুল হুদা বাবু ডিপিইও’র ‘খুশি’ করার খরচ বাবদ আদায় করেছেন ৭৯ হাজার টাকা। ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে ৭৯ হাজার টাকা আদায় করার মাধ্যমে বাবু আয় করেছেন ১৪ হাজার টাকা-এমন দাবি শিক্ষকদের।
কেশবপুর উপজেলায় মোট ১৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ডিপিইও’র সংবর্ধনার নামে শিক্ষক নেতা নাজমুল হুদা বাবু প্রতিটি স্কুল থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সেই হিসেবে তিনি ৭৯ হাজার টাকা আদায় করেছেন। যা পরিশোধ করতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষকদের।
ডিপিইও মোফাজ্জেল হোসেন খান যশোরে যোগদানের পরেই গোটা জেলাজুড়ে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেন। ডিপিইও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শিক্ষকদের মধ্যে। এ কারণে তারা ডিপিইও ‘খুশি’ করার মিশন হাতে নেন। এমনকি সদর উপজেলার এক শীর্ষ শিক্ষা কর্মকর্তাতো ডিপিইওকে খাবার যোগান দেওয়া শুরু করেন। যদিও তিনি একদিনও নিজের বাড়ি থেকে এই খাবার দেননি। যতদিন দিয়েছেন তার সব শিক্ষকদের বাড়ি থেকে। আর খাবার জোগাড় করতে টার্গেট করেন বিভিন্ন স্কুলের নারী শিক্ষকদের। অনেক নারী শিক্ষক জেলা কর্তাকে খাবার দিতে পেরে নিজেকে ‘ধন্য’ মনে করেন। এক নারী শিক্ষকতো রীতিমতো ডিপিইও’র পরিবারকে রাতে দাওয়াত করে আর্স বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চৌগাছার সলুয়া বাজার শাখার অফিসে নিয়ে খাওয়ান। ওই শাখার প্রধান ডিপিইওকে আমন্ত্রণকারী নারী শিক্ষকের স্বামী বলে সূত্র জানিয়েছে। এই খুশি করার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখলের চেষ্টা চালান কেশবপুরের শিক্ষক নেতা নাজমুল হুদা বাবু। এবং শেষ পর্যন্ত বাজিমাতও করেন তিনি। যদিও এই খুশি করতে তার পকেট থেকে এক পয়সাও খরচ হয়নি। বরং পকেটে ঢুকেছে!
কে এই নাজুমল হুদা বাবু
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেশবপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বাবু সবসময় সরকার দলীয় লোক! তিনি কখনো বিরোধী দলের হতে চান না। বাবু বিয়ে করেছেন কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌরমেয়র আব্দুস সামাদ বিশ্বাসের মেয়েকে। এ কারণে বিএনপি আমলে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য এক শিক্ষক নেতা। ওইসময় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেননি বলে একাধিক প্রবীণ শিক্ষক জানিয়েছেন। কেবল তাই না, শিক্ষক সমিতি মানে নাজমুল হুদা বাবু বলে সবাই মনে করতেন।
আওয়ামী লীগের আমলেও তাকে বিরোধী দলের লোক হতে হয়নি! কারণ তার চাচা সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতা। এ কারণে তিনি চাচার বলে বলিয়ান ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানেও সেই অবস্থা বিরাজমান বলে সূত্রের দাবি।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নওশাদ আলমকে বাইপাস করে সবকিছু বাবুই করছেন দীর্ঘদিন ধরে। অপ্রতিরোধ্য বাবুর লাগাম টানার মতো কেউই কেশবপুরে নেই বলে সূত্রের দাবি।
১৫৮ স্কুল থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিতো টাকা তুলিনি। মণিরামপুরে তুলেছে। ভাই আপনি দয়া করে কেশবপুরে আসেন, সামনাসামনি কথা বলবো।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নওশাদ আলম বলেন, ‘সংবর্ধনা দিতে পারিনা। আমরা অধীনস্ত হিসেবে আতিথেয়তা দিয়েছি মাত্র। টাকা তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই।’