পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

জাহাঙ্গীর হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি : পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় শেরপুরের সহকারি পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ডিডি) রায়হানুল ইসলামের বিরুদ্ধে অফিস পরিচালনায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানিসহ দায়িত্ব পালনে বাঁধা, হয়রানিমূলক বদলী, বিধিবহির্ভূত মনগড়া আদেশ জারীসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে উপপরিচালকের পদটি শূণ্য থাকায় রায়হানুল ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে তিনি এসব যাচ্ছেতাই কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায় ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা রায়হানুল রাত্রিকালে স্টেশনে না থেকে প্রতিদিন অফিস শেষে বাড়ি চলে যান। তাঁর কার্যালয়ের অফিস সুপার নূরুল হক ও পরিবার পরিকল্পনা শেরপুর সদর কার্যালয়ের পরিবার পরিকল্পনা সহকারি (টিএফপিএ) মুনীর হোসেন রায়হানুলের নানা অপকর্মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।

রায়হানুল বিধি বহির্ভূতভাবে তাঁর আস্থাভাজন নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা সহকারি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাদিউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) করে আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা প্রদান করেছেন। হাদিউল নালিতাবাড়ী উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) স্নিগ্ধ রায়হানের সাথে যোগসাজশ করে বিল-ভাউচারে স্বাক্ষরপূর্বক আয়ন-ব্যয়ন কর্ম সম্পাদন করে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন।

জানা যায় নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাদিউলকে ৩০/০৫/২০২১ ইং তারিখে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশে (নিয়মিত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) নিয়োগ/পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত) ক্লিনিক্যাল ও নন ক্লিনিক্যাল অধিক্ষেত্রের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক আদেশে ০৯/০৪/২০২৩ ইং তারিখে নবনিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) ডা. মো. শরীফ হোসেন নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে যোগদান করেন। শরীফ যোগদান করার পর হাদিউলের অনৈতিক স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ায় রায়হানুলের ছত্রছায়ায় হাদিউল নিজে এবং স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের দ্বারা শরীফকে নানাভাবে ভয়ভীতি, হুমকী-ধমকী ও অপমান-অপদস্ত করে এলাকা থেকে বিতাড়িত করেন।

পরবর্তীতে ২৭/০৮/২০২৩ ইং তারিখে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রায়হানুল তাঁর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ডা. শরীফের আয়ন-ব্যয়ন ক্ষমতা বাতিল করে তাঁর আস্থাভাজন ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা হাদিউলকে নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) হিসেবে আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা প্রদান করেন। সূত্র জানায় জেলায় একাধিক ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা থাকার পরেও ১০ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রায়হানুল কোনভাবেই নিজ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) করে আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা প্রদান করতে পারেননা।

শ্রীবরদী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সাবেক ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) শফিকুল ইসলাম (স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত)চিকিৎসাজনিত ছুটিকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রায়হানুল প্রথমে তাঁকে ডেপুটেশনে নালিতাবাড়ি ও পরে ছুটিকালীন সময়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় হয়রানিমূলক বদলি করান।

শেরপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ক্লিনিক) ডা.মিজানুর রহমান ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রায়হানুলের রোষানলে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ববিহীন ও সরকারি কোয়ার্টারবিহীন হয়ে আছেন। কোয়ার্টার দখল করে রেখেছেন রায়হানুলের আস্থাভাজন
পরিবার পরিকল্পনা শেরপুর সদর কার্যালয়ের পরিবার পরিকল্পনা সহকারি (টিএফপিএ) মুনীর হোসেন। এব্যাপারে কথা বলার জন্য ডা.মিজানের ফোনে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে এ প্রতিনিধিকে তাঁর অফিসে চায়ের আমন্ত্রণ জানান।

ডা. শরীফ জানান আমি নালিতাবাড়ি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) পদে যোগদান করার পর সহকারি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাদিউল আমাকে চেয়ারে বসতে দেয়নি। হাদিউল ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রায়হানুলের যোগসাজশে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের দ্বারা আমাকে নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতন, অপমান-অপদস্ত ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অফিস ও এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছেন। আমি বিষয়টি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জানিয়েছি। বর্তমানে আমি হাদিউলের ভয়ে নালিতাবাড়ী অফিসে যেতে পারছিনা এবং অন্য কোথাও পোস্টিং নিতে পারছিনা।

শ্রীবরদী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সাবেক ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান আমি চিকৎসাজনিত ছুটিকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রায়হানুল ডেপুটেশনে আমাকে নালিতাবাড়ী পাঠিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন। আমি নোটিশের জবাব দেওয়ার পর ছুটিকালীন সময়ে আমাকে তিনি উর্ধতন কতৃপক্ষের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় হয়রানিমূলক বদলী করান।

নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) হাদিউল ইসলাম জানান উপজেলার রাজনগর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সিকিউরিটি গার্ড/পিয়ন কাম চৌকিদার কোয়ার্টারে থেকে নানা অনিয়ম করছে। তাঁকে কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে বলায় সে আমাকে সচিব দিয়ে ফোন করিয়েছে। আমার পিছে সাংবাদিক লাগিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালকের স্বাক্ষরিত যে আদেশে আমি ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) হয়ে আয়ন-ব্যয়ন কাজ করছি সে আদেশের কপি আমার কাছে নেই। উপপরিচালকের অফিসে গেলেই আপনারা সে আদেশ দেখতে পারবেন।

নালিতাবাড়ী উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) স্নিগ্ধ রায়হান জানান নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা হাদিউল ইসলাম পরিবার পরিকল্পনা শেরপুর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ডিডি) রায়হানুল ইসলাম স্বাক্ষরিত যে আদেশে নালিতাবাড়ি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) হয়ে আয়ন-ব্যয়ন কর্ম সম্পাদন করছেন সে আদেশটি বৈধ নয়। আমরা আদেশটি পর্যালোচনা করে উর্ধতন কতৃপক্ষের পরামর্শে প্রয়োজনে বাতিল করে দিব। অবসরপ্রাপ্ত সাবেক হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রায়হানুলের স্বাক্ষরিত ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) হাদিউলের আয়ন-ব্যয়ন কর্ম সম্পাদনের অফিস আদেশটি অবৈধ। আমি কর্মকালীন সময়ে বিষয়টির উপর আপত্তি জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রায়হানুল ইসলামকে একটি পত্র পাঠিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে তিনি এর একটি লিখিত উত্তর পাঠিয়েছিলেন যা নালিতাবাড়ী হিসাবরক্ষণ অফিসে জমা আছে।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় শেরপুরের সহকারি উপপরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ডিডি) রায়হানুল ইসলাম তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগেরর সত্যতা অস্বীকার করে বলেন ডা.শরীফ নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) পদে যোগদান করার পর তিনি লাপাত্তা হয়ে যান। অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে কাজে ফেরাতে পারিনি। এতে বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে অনেক কর্মচারী অর্থকষ্টে পড়েন। পরবর্তীতে আমি জনস্বার্থে আমার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের মাধ্যমে নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা সহকারি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাদিউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) করে আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ছাড়ের চেষ্টা করি। বিষয়টি নিয়ে নালিতাবাড়ি উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে কোন আপত্তি জানানো হয়নি। আপত্তি জানালে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পরিবার পরিকল্পনা ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক মীর সাজিদুর রহমান জানান পরিবার পরিকল্পনা শেরপুর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ডিডি) রায়হানুল নিজ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ১০ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এমসিএইচ-এফপি) করে তাঁকে আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা প্রদান করতে পারেননা। এমন নজিরের কথা আমি ইতিপূর্বে শুনিনি। আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *