সাইবার সহিংসতা কমাতে ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধির সুপারিশ বিশেষজ্ঞদের

ডেস্ক রিপোর্ট : সাইবার সহিংসতা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা নারীর প্রতি সাইবার সহিংসতা কমিয়ে আনতে নারীদের ‘ডিজিটাল লিটারেসি ট্রেনিং’ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছেন।
‘নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা: বাস্তবতা ও করণীয়’ বিষয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তারা আজ এ সুপারিশ করেন। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সিরডাপের এটিএম শামসুল হক মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি)’র চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর শিকদার; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাইবার ট্রাইবুনাল, ঢাকা এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) এ এম জুলফিকার হায়াত এবং বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (প্রটেকশন এন্ড প্রটোকল) আমেনা বেগম, বিপিএম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।
ভারপ্রাপ্ত তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক দিল আফরোজ বেগমের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সভাপতি ও সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড এর অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহার, সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন এর সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ, বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন এর বক্সার তামান্না হক, নিঃসঙ্কোচ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ফাহিম এবং শিশু কিশোর ক্রিকেট উইমেনস একাডেমির টিম ম্যানেজার লামিয়া জালাল প্রমুখ।
শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন,সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের অনেক ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। সাইবার দুনিয়া একটি মুক্ত জায়গা যেখানে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই দিতে হবে। এক্ষেত্রে সবার প্রযুক্তি জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেমন বাচ্চাদের নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবহার শেখাতে হবে, তেমনি বাচ্চাদের মনিটরিং করার জন্য অভিভাবকদেরও প্রযুক্তি জ্ঞান বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ না করে বাচ্চাদের ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে মেধা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। তিনি বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সময় বিটিআরসির নির্দেশ অনুসারে প্যারেন্টাল কন্ট্র্রোল গাইডলাইন অনুসরণ করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জানান, সোশাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক এদেশে নেই। এরপরও বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিটিআরসি’র উদ্যোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ৩৫ হাজার ্আপত্তিকর কনটেন্ট ফেসবুক থেকে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন তার মূল প্রবন্ধে বলেন, সাইবার বুলিং ও সহিংসতা কমাতে ডিজিটাল লিটরেসির কোন বিকল্প নেই। ডিজিটাল লিটরেসি ট্রেনিং এবং ডিজিটাল সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। একই সাথে সামাজিক এবং কমিউনিটি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বড় পরিসরে প্রচারণা চালাতে হবে। তিনি এই সচেতনতা প্রচারণার মধ্যে ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহার, কিশোর-তরুণদের এই মিডিয়া ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিধান সম্পর্কে ধারণা এবং এ বিষয়টি শিক্ষা কার্যক্রমের সিলেবাসেও অন্তর্ভূক্ত করার পরামর্শ দেন।
সাইবার ট্রাইবুনাল, ঢাকা এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) এ এম জুলফিকার হায়াত বলেন, সাইবার স্পেসে বেশিরভাগ নারী ভিকটিম হয় প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার অভাবে এবং অপরাধ প্রমাণের জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ না থাকার কারনে অপরাধী মুক্তি পেয়ে যায়। তিনি বলেন, বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহারের আগে পরিস্কার ধারণা নিতে হবে এবং ফেসবুক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।
একটি নির্দিষ্ট বয়সের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেয়া থেকে অভিভাবকদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে একাধিক সিমকার্ড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং টিকটক, ইমো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনি নীতিমালা তৈরির ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (প্রটেকশন এন্ড প্রটোকল) আমেনা বেগম, বিপিএম বলেন, মাঠ পর্যায়ে ৬৫৯ টি পুলিশি থানা আছে। এসকল থানার মামলা তদন্ত কর্মকর্তাদের সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এতে ঢাকা সিটির চাইতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের সাইবার সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুকিঁ বেশি। এসব ক্ষেত্রে আন্ডার রিপোর্টিংয়ের জন্য এক্সপ্লয়টেশন বেশি হচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগ এবং তরুণদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সাইবার ক্রাইম মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ৫৩ বছর ধরে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করতে যেয়ে দেখা গেছে নারীর অগ্রগতির পথে মুল বাধা নারীর প্রতি সহিংসতা। সহিংসতার ক্ষেত্রে নূতন নূতন ধরণ যুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে সাইবার সহিংসতা বেড়েছে। তিনি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নোভা আহমেদ, সাইবার টিনস-এর সাদাত রহমান এবং অদিতি সওদাগর, আয়োজক সংগঠনের সম্পাদকম-লী, কর্মকর্তা, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন এন্ড চিলড্র্রেন প্লাটফর্মের সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক. শিক্ষার্থী, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *