রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসিকে প্রত্যাহার

ডেস্ক রিপোর্ট : এক গৃহবধূর কাছে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও ভাইরালের পর রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার ওসি মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার পর ওসির ঘুষ দাবির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এর পর রাতেই তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার আদেশ জারি করেন রাজশাহী পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান।

রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্ত করে শনিবার রাতেই চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার তাকে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ঘুষ চাওয়ার ঘটনা যদি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসি তার কোয়ার্টারের শয়নকক্ষে ঐ গৃহবধূ (২৮) ও তার ছেলেকে ডেকে নেন এবং গৃহবধূর কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাড়িছাড়া ঐ গৃহবধূ। এ বিষয়ে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ঐ গৃহবধূ। অভিযোগের অনুলিপি সরাসরি ও ডাকযোগে পুলিশের আইজি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নসহ গণমাধ্যম অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড ক্লিপও পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু বেশ কিছুদিন ধরে কারাগারে রয়েছে। কালু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে সাহারা বেগম দাবি করেন।

ফাঁস হওয়া ঐ অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারো কথা শুনি না।’ এরপর চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার জন্য জেলা ডিবির ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, ‘২ লাখ টাকা দেন কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দিব।’ উল্লেখ্য, জেলা ডিবির ওসি কালুকে ‘মাদকসহ’ গ্রেফতার করেছিলেন।

এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি আরো বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিল কালু)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার নিচে ছাড়াতে পারব না।’ এরপর বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে, কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে।’ অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের সুন্দর চেহারা নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।

সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবত্ পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করে। এরপর থেকে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুক্তার, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। তিনি বলেন, চারঘাটের চামটা গ্রামের আনজুর ছেলে মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাইমুদ্দিনের ছেলে সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একই সঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানায় গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *