কেশরহাট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় আদালতে মামলা
আলিফ হোসেন,তানোর : রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোচিত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, জনমনে ক্ষোভ। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিদ্যালয়ের প্রায় শতকোটি টাকা মুল্যর সম্পত্তি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও গত ২৩ আগস্ট বুধবার সকালে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের কেশরহাট বাজারে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন এলাকাবাসী। এদিকে অভিভাবক সদস্য আব্দুল আজিজ বাদি হয়ে প্রধান শিক্ষককে আসামি করে রাজশাহী জেলা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৫ এ মামলা করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও বিস্ফোরণ মুখ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মামলা সুত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি ব্যক্তি স্বার্থে বিক্রয় বা ব্যাংকে মর্টগেজ দিয়ে গ্রহণের অনুমতি নাই। কিন্তু কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের জমি (কেশরহাট মৌজা, জেএল নং ১০৮, হাল দাগনং ৬২৬, ৬২৪, ৬২৫, ৬২৬, ৬২৭, ৬২৮, ৬২৯ ও ৬৩২, পরিমান- ১ দশমিক ৪৩৩২ একর) বন্ধক দিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যার মর্টগেজ দলিল নম্বর ৩০২৫/২০২০ এবং পাওয়ার অব এটর্নি নম্বর ৩০২৬/২০২০। তবে এই টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে (হিসাব নম্বর ১৩১ রায়ঘাটি শাখা) জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে কেশরহাট স্কুল মার্কেটে এক শতক জমির মুল্য প্রায় কুড়ি লাখ টাকা।সেই হিসেবে ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিতে স্কুলের প্রায় শতকোটি টাকা মুল্যর জমি বন্ধক রাখা নিয়ে অভিজ্ঞ মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সচেতন মহলের অভিমত, স্কুলের সম্পত্তি বিক্রির সুযোগ নাই। যে কারণে প্রায় শতকোটি টাকা মুল্যর এসব সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে একটি প্রভাবশালী চক্র তৎপর রয়েছে। এই চক্রের যোগসাজশে প্রধান শিক্ষক ৪০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পত্তি বন্ধক দিয়েছেন। তাদের কৌশল ঋণ খেলাপীর দায়ে সম্পত্তি ব্যাংক যেনো হাতিয়ে নেয়। পরে তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিতে পারেন।
এদিকে সম্পত্তি বন্ধকের বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে আলোচনা হলেও কয়েকদিন আগে তা প্রকাশ পায়। ব্যাংকের কিস্তি না দেওয়ায় নোটিস আসলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হয়। এরপর চলতি মাসের ১১ তারিখে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলে ঋণের ৪০ লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু স্কুল ফান্ডে এই টাকা জমা দিতে অস্বীকার করেন। এতে অভিভাবক সদস্য ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে ঋণকৃত সমুদয় টাকা জমা ও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে আদালতে মামলা করেন আব্দুল আজিজ নামের ওই অভিভাবক সদস্য।অভিভাবক মহল স্কুলের জমি বন্ধকের ঘটনা তদন্ত ও জড়িতদের নাম প্রকাশসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তৎকালিন ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েই ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল। তিনি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। আরো কিছু প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তিনি ডাক্তারের কাছে এসেছেন পরে কথা হবে।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রুস্তম প্রামানিক ঋণের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জমি মর্টগেজ দিয়ে ঋণ উত্তোলন খুবই দুঃখজনক ঘটনা’। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের জমি দিয়ে ব্যক্তি ঋণ নিতে পারে এটিও জানা নেই। আবার ব্যাংক কিভাবে প্রতিষ্ঠানের জমি বন্ধক নিয়ে ঋণ দেন সেটিও জানা নেই’। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার পরে বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অনিয়মের খবর পাচ্ছি’। এসব কারণে বুধবার একটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এব্যাপারে উত্তরা ব্যাংক কেশরহাট শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এদিকে গত ২২ আগস্ট অভিভাবক সদস্য ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন। এতে প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে তার অফিস কক্ষেই তার ক্যাডার বাহিনী ওই এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের পুত্র মহসীন আলী, আক্তারুল ইসলাম ও মনা দিয়ে কেশরহাট বাজার বনিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিঠুকে হাতুড়ি পেটা করে। মিঠুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মাথায় ৩১টি সেলাই দিতে হয়েছে।