কক্সবাজারে ভারী অস্ত্র হাতে গুলি বর্ষণকারী এরা কারা ?

কক্সবাজার প্রতিনিধি: মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু এবং ৬ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন ১৩ জন। সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরিহিত কয়েকজনকে ভারী অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের পর থেকেই স্থানীয়দের মুখে মুখে একটি প্রশ্ন বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। তা হলো- প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণকারী কারা? জামায়াতে ইসলামী বলছে, হামলাকারীরা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতই পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে হামলা করেছে। সংঘর্ষে নিহত চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল ফজলের ছেলে মোহাম্মদ ফোরকানকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াত। জামায়াতের কক্সবাজার শহরের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুকের দাবি, চকরিয়ায় গায়েবানা জানাজা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন হয়। যেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে চকরিয়া পৌরসভায় বায়তুশ শরফ রোডের মাথায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন প্রকাশ্যে গুলি করে। এতে জামায়াতকর্মী ফোরকান নিহত হন। আহত হন অনেকেই। এসময় অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। গুলি বর্ষণকারীরা অনেকটা চিহ্নিত বলে দাবি করেন তিনি। তবে নিহত মোহাম্মদ ফোরকান কোনোভাবেই জামায়াত কর্মী নন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম। তিনি জানান, বুধবার আড়াইটার সময় মোহাম্মদ ফোরকানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওখানে তার বড় ভাই বক্তব্য রেখেছেন। বক্তব্যে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ফোরকান কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাদের পরিবার এবং স্বজনরা নৌকায় ভোট দেয়। তিনি বলেন, জানাজায় আমিসহ অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এতো কথা বলে যাচ্ছে, কিন্তু জানাজায় জামায়াত-বিএনপির কোনো নেতাকর্মী তো ছিলেন না। তারা শুধু শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে পরিকল্পিতভাবে চকরিয়া ও পেকুয়ার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এর নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন জড়িত। ঘটনায় অস্ত্র হাতে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে। তবে আবদুল্লাহ আল ফারুকের দাবি, চকরিয়ার সংঘর্ষে হেলমেট পরে; অস্ত্র, লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেওয়াদের নেতৃত্ব দিয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর। তিনি বলেন, লায়ন আলমগীর ওই আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আলমগীরের নেতৃত্বেই গুলি করা হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে লায়ন আলমগীরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এমপি জাফর আলম বলেন, জামায়াত মিথ্যাচার করছে। কোনো কারণ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। শোক দিবসের কর্মসূচি ও বন্যা কবলিতদের ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থায় ছিলেন সবাই। পুলিশের ওপর হামলা হচ্ছে জেনেই আমিসহ নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, পুলিশ কোনোভাবেই গুলি বর্ষণ করেনি। বরং পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত তিনিসহ পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। অস্ত্র হাতে থাকা ব্যক্তি কারা তাও তদন্ত করে বের করা হবে। পুলিশের পক্ষে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলামও বলেছেন, চকরিয়ার ঘটনায় পুলিশ গুলি বর্ষণ করেনি। কারা গুলি করেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে কি না তদন্ত করা হচ্ছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে নিজেরাই এমন ঘটনা ঘটানোর বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *