প্রবাসী দুই ছেলের দালানে ঠাঁই পেলেন না বৃদ্ধ বাবা!
ডেস্ক রিপোর্ট : বাবা মানে গল্পের আড়ালে থাকা একজন মহানায়ক। বাবা ছাড়া আর কেউ ঢাল হয়ে দাঁড়ায় না সন্তানের বিপদে। অথচ বাবার বিপদের সময় সন্তানরা সহযোগিতা তো দূরে থাক, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যান।
এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। তেমনি প্রবাসী দুই ছেলের দালানে ঠাঁই পাননি শতবর্ষী এক বাবা। কোনো উপায় না পেয়ে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। এমন ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার মৈশাইদ গ্রামে।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের জাকনী মিজিবাড়ির বাসিন্দা বৃদ্ধ আবুল বাশার মুন্সী। দুই ছেলে ও চার মেয়ের জনক তিনি। বর্তমান বয়স ১১২ বছর। মসজিদে ইমামতি করতেন তিনি। দুই ছেলেকে বড় করতে গিয়ে দুই একর সম্পত্তিও বিক্রি করেছিলেন এই বাবা। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়লে ছেলেদের ঘরে তার ঠাঁই হচ্ছে না। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে এ মানবিক বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পর জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে সুরাহা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী আবুল বাসার মুন্সী বলেন, বড় ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য বেশিরভাগ সম্পত্তি বিক্রি করেছি। ছোট ছেলের জন্যও শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করেছি। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর এখন আমি ছাড়া আমার কেউ নেই। কিছুই নেই। এ অবস্থায় আমার পাশে দাঁড়াচ্ছে না আমার ছেলেরা। এর চাইতে আর দুঃখ কি আছে?
এদিকে প্রায় আট-নয় বছর ধরে স্বামীর সংসারে থেকেও বৃদ্ধ মা-বাবার সেবা করছেন মেয়ে নুরজাহান বেগম। মা মারা যাওয়ার পরও বাবার দায়িত্ব নেয়নি দুই ভাই।
বড় ছেলে শাহাদাত ডিগ্রি পাশ। সে সৌদি প্রবাসী। তার পেছনে বাবার সম্পত্তি সব খোয়াতে হয়েছে। ছুটিতে বাড়ি এলেও বাবাকে আশ্রয় না দেওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলতে নারাজ।
তবে ছোট ভাই আনোয়ারের স্ত্রী বলছেন, তিনি অসুস্থ। সন্তানদের নিয়ে সংসারের কাজ করাটাই কষ্টকর। তাই শ্বশুরকে তিনিও রাখতে পারছেন না।
হাজীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি ঘৃণিত কাজ। পিতামাতার জন্য ২০১৩ সালের ভরণ-পোষণ আইনে সন্তানদের জন্য জেল-জরিমানার বিধান আছে। ছেলেরা বাবার দায়িত্ব না নিলে আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম তানজীর বলেন, এ ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন কষ্টের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আবুল বাশার মুন্সীকে এটি অত্যন্ত অমানবিক।