শিক্ষকদের ফাঁদে ফেলে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগঝিনাইদহে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
লালন মন্ডল, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককদের নানা অনিয়মের সুযোগ নিয়ে শিক্ষকদের ফাঁদে ফেলে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠা সেই ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্তটিম গঠনের আশ্বাস প্রদান করেছেন খুলনা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের উপ পরিচালক রুহুল আমিন। একাধিক পত্র পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষা অধিদপ্তর। এ বিষয়ে নিজ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও আছেন অসস্থিতে।
গত ১৩ জুন ২২ সালে ঝিনাইদহে যোগদানের পর থেকে ঘুস-দুর্নীতির মহা আখড়ায় পরিনত হয়েছে অফিসটি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মো. মনিরুল ইসলামের নানা ধরনের ঘুস গ্রহনের তথ্য। শিক্ষা অফিসারকে ঘুস দিয়ে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। বিশেষ করে টাইম স্কেল, আপার স্কেল, বিএড, কর্মচারি নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধির চিঠির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিলেই শিক্ষা অফিসার মোটা অংকের টাকা দাবি করে থাকেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি ডিজির প্রতিনিধি নিয়োগ দেন না। এমনকি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাগজপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চল, খুলনাতে ফাইল না পাঠিয়ে টাকার বিনিময়ে পরবর্তীতে ছাড়েন। বিশেষ করে নতুন এমপিও, পদোন্নতি আর ট্রান্সফার এর ক্ষেত্রে ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুস দিতে হয় জেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলামকে। চাকুরী করার কারনে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথা বলতে না পেরে নিরবে ঘুষ প্রদান করে আসছেন অনেক বেসরকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা। কয়েকজন বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষকদের মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) প্রদানের সুযোগ নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ঐ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও নৈতিক স্খলন জনিত কারণে কোন শিক্ষক অপরাধ করলেও তদন্ত কমিটি গঠনের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন জেলা কর্মকর্তা। ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে জেলার সরকারি বিদ্যালয়ে প্রদান শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে গিয়েও টাকা দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর যশোরে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে ধরা খান কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোয়ার হোসেন অসিম। এরপর গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু সেই শিক্ষকের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। বারপাখিয়া দাখিল মাদ্রাসার নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের সংসবাদ গনমাধ্যমে প্রকাশের পর তদন্তের নামে মোটা অংঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। শৈলকূপা উপজেলার দুধসর আব্দুস সোবহান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে তিনি দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে গোপন সূত্রে জানা যায়।
মহেশপুরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডিজির প্রতিনিধি আনতে গেলে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করার পরও তাকে ডিজির প্রতিনিধি না দিয়ে আরো টাকা দাবি করেন। এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগের ডিজির প্রতিনিধি আনতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ১ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। একই উপজেলার বারোপাখিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তিনি তা তদন্তের নামে মোটা অংকের টাকা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মনিরুল ইসলামের মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি টাকা নিয়েছি তার কোনো প্রমাণ আছে? আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাকে কেন টাকা দিবে? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
খুলনা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের উপপরিচালক রুহুল আমিন বলেন, দূর্নিতির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি আমি অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। তদন্ত সহকারে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও নিশ্চিত করেন এই কর্মকর্তা।