ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক আদায়, ২ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

ডেস্ক রিপোর্ট : শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এক ব্যবসায়ীকে থানায় উঠিয়ে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক আদায় এবং ৪ আসামিকে নির্যাতনের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশটি সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পৌঁছায়।

মোস্তাফিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম ও সুরুজ উদ্দিনকে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ৭ জুন মোস্তাফিজুরকে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা থেকে প্রত্যাহার করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছিল।

শরীয়তপুরের নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চৌকদারকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক নেওয়ার এবং একটি ছিনতাই মামলার ৪ আসামিকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠার পর এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আরেক পুলিশ কর্মকর্তা নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার ১ জুন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, ৩১ মে গভীর রাতে তাকে বাড়ি থেকে থানায় তুলে নেন জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে নিয়ে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওই থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাকে ওই ছিনতাই মামলার আসামির তার চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তার নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর।

তখন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে (আবু জাফর) মারধর করেন। এক পর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তার চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর। ওই চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়।

আবু জাফরের ওই অভিযোগ তদন্ত করছিলেন শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। গতকাল তিনি পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই চার আসামির ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২৯ মে তারা উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন পান। এরপর রাতে তারা ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে তাদের আটকে রেখে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান নির্যাতন করেন। এরপর দুই দিন থানায় আটকে রেখে তাদের নির্যাতন করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদেরকে নির্যাতনের চিত্র আদালতের নজরে এলে তাদের চিকিৎসা করানো ও মেডিকেল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মেডিকেল প্রতিবেদন পাওয়ার পর ৭ জুন শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ৫ ধারা বিধান অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এমন খবর লোকমুখে শুনেছি। কোনো আদেশ পাইনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ পালন করেছি মাত্র।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, এক ব্যবসায়ী তাকে (আবু জাফর) নির্যাতন করে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার একটি অভিযোগ করেছিলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ২ জুন থেকে ঘটনাটি তদন্ত করছি। গতকাল তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের কাছে জমা দিয়েছি।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের শরীয়তপুর থেকে অন্যত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *