অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনপুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী-শাশুড়ির নামে মামলা

ফেনীতে কর্মরত এক পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১৮ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার মামলাটি করেন। এতে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ও শাশুড়িকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার খবর পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ আবদুল্লাহ আত্মগোপনে চলে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সৈয়দ আবদুল্লাহ বর্তমানে ফেনি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অপরাধ শাখার পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত আছেন। তার বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া তালুকপাড়া গ্রামে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আবদুল্লাহ প্রতারণার উদ্দেশ্যে স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেন, যা ব্যবহার করে তিনি এক কোটি টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র কেনেন। ফারহানা আক্তারের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৪ টাকার আমানত গচ্ছিত রাখা এবং ৩১ লাখ টাকায় গাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আবদুল্লাহর নিজ নামে দুটি প্লট, ফারহানা আক্তারের নামে দুটি আবাসিক ফ্ল্যাট, একটি বাণিজ্যিক স্পেস কেনা হয়েছে। ফারহানা আক্তারের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা পরিশোধ করে তার (ফারহানা) মা কারিমা খাতুনের নামে আবাসিক ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে আসামিরা অবৈধভাবে ১৮ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার ২৮৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, সৈয়দ আবদুল্লাহ পদমর্যাদার অপব্যবহার করে ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা নিজের নামে এবং স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে রেখেছেন।

জানা যায়, আবদুল্লাহ ১৯৯১ সালে উপপরিদর্শক হিসাবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ২০০৭ সালে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানায় ওসি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ ওই সময় (২০২০ সালে) অনুসন্ধানের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বরিশালে পাঠানো হয়। এরপর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরোজপুরের সহকারি পরিচালক মো. মোস্তাফিজ অনুসন্ধান শুরু করেন। অনুসন্ধানে সৈয়দ আবদুল্লাহ এবং তার স্ত্রী-শাশুড়ির নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরোজপুরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ বলেন, অনুসন্ধানে সৈয়দ আবদুল্লাহ এবং তার স্ত্রী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে ১৮ কোটি সাড়ে ১৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারা ও দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪২০/ ১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২), ৪ (৩) ধারায় মামলা হয়েছে।

সৈয়দ আবদুল্লাহর শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে রাজধানীর গুলশানের নাভানা এসিলমন প্যালেসের ১২ তলায় একটি ৩ হাজার ৯০৯ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটটি ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে রাজধানীর কাকরাইলে বাণিজ্যিক ভবন গ্রিন সিটি রিজেন্সির তৃতীয় তলায় ২ হাজার ১২০ বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেস, ২৬৬ বর্গফুটের গাড়ি পার্কিংসহ মোট ২ হাজার ৩৮৬ বর্গফুট জায়গা রয়েছে, যার মূল্য ২ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ফারহানার নামে রাজধানীর বড় মগবাজারে নির্মিত দ্য ওয়েসিস কমপ্লেক্স টাওয়ারের ১০ম তলায় ২ কোটি ৭৩ লাখ ৪ হাজার ২৩২ টাকা মূল্যের ২ হাজার ১৫০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট, খিলগাঁও পুলিশ প্রজেক্ট সাউদার্ন পার্ক-১, ব্লক-এম পশ্চিম নন্দীপাড়ায় ২ হাজার বর্গফুটের ৪ লাখ টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে। আর আবদুল্লাহর নিজ নামে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটিতে ছয় কাঠা করে দুটি প্লট রয়েছে। ২টি প্লটের জন্য এ পর্যন্ত তিনি ৪০ লাখ ৪২ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *