খুলনার মেয়রের তথ্য তলবের ভুয়া চিঠি
বিশেষ প্রতিনিধি: খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রের এফডিআরের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নামে ভুয় চিঠি ইস্যু করেছে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসবিএসি)। ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের অন্যতম তালুকদার খালেককে চাপে ফেলতে এমন করা হয় বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ব্যাংকের এমডিকে জরুরি তলব করে বিএফআইইউ। এর পর গতকালই তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এসবিএসি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। তিনি ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আমজাদ দেশ ছাড়ার পর তিনি ব্যাংকের পরিচালক পদ ছাড়েন। তালুকদার খালেকের সহায়তায় এস এম আমজাদ শিগগির দেশে ফিরছেন ব্যাংকে এমন একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এর পরই তালুকদার খালেককে চাপে ফেলতে বিএফআইইউর নামে ভুয়া চিঠি ইস্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে এমডিকে চিঠি দেয় বিএফআইইউ। চিঠিতে বলা হয়, বিএফআইইউর পক্ষ থেকে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রের তথ্য চেয়ে কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি। অথচ এসবিএসি ব্যাংকের সিএফও মো. মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ ইউনিটের নাম ব্যবহার করে খুলনা শাখার ব্যবস্থাপককে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যা বিএফআইইউর নির্দেশনার লঙ্ঘন। এ অবস্থায় আপনাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তিন দিনের মধ্যে জানাতে হবে। এ ছাড়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারী মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করে মাসুদুর রহমানসহ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে আগামী ৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। বিএফআইইউর চিঠির আগে এমডিকে তলব করা হয়। এর পর ব্যাংকে ফিরে তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিনজন হলেন ব্যাংকটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মো. মাসুদুর রহমান, প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান এবং খুলনার কেডিএ করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক বিধান কুমার সাহা। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে এসবিএসি ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলার মধ্যে ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালান। তার পর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন আব্দুল কাদির মোল্লা। মানি লন্ডারিং, ইডিএফের ঋণের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত আগস্টে কাদির মোল্লার লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য তলব করে বিএফআইইউ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক একজন নীতিনির্ধারকের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তদন্ত আর এগোয়নি।
জানতে চাইলে এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মোল্লা বলেন, সিএফওকে দিয়ে চিঠি ইস্যু করানোর প্রশ্নই ওঠে না। কেউ এটি বলে থাকলে মিথ্যা বলেছে। তিনি বলেন, ব্যাংকের তিনজনকে বরখাস্ত করার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে কেন করা হয়েছে এসব জানেন না। ব্যাংকে গেলে হয়তো জানতে পারবেন। ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা বিএফআইইউকে জানিয়েছেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা এফডিআর করার ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম হয়েছে। তিনি যেহেতু সাবেক চেয়ারম্যানের লোক, যে কারণে তাঁকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে বিএফআইইউর নাম ব্যবহার করে তথ্য চাওয়া হয়। এর পর সেই তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয় গণমাধ্যমে। গত ২৫ মে ব্যাংকের সিএফও মো. মাসুদুর রহমানের স্বাক্ষরে চিঠিটি দেওয়া হয়। সাধারণভাবে কোনো ব্যক্তির তথ্য প্রয়োজন হলে বিএফআইইউ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেয়। প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাগুলোতে চিঠি দিয়ে তথ্য নেওয়া হয়। একই কায়দায় ওই চিঠি ইস্যু করেন এসবিএসি ব্যাংকের সিএফও। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের চাহিদা অনুযায়ী আপনার শাখায় নিম্নোক্ত কাস্টমার আইডিধারী গ্রাহকদের সব ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের তথ্য ২৮ মের মধ্যে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, সব ধরনের সাপোর্টিং ডকুমেন্ট, স্টেটমেন্টের শেষ ১০ পৃষ্ঠা এবং এফডিআরের ক্ষেত্রে জমা প্রদানের ভাউচার (চেক বা নগদ) পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। সেখানে একটি ছকে ‘মেয়র কেসিসি, প্রজেক্ট ৬০০ ক্রোর’ উল্লেখ করা হয়। এর পর একটি কাস্টমার আইডি দেওয়া হয়, যার নম্বর ০০৫৫১০৯০৭৯।